বাজারে এখনো ঝাঁজ কমেনি পেঁয়াজের। সেই সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে কাঁচা মরিচের ঝাল। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের নানা উদ্যোগে মাঝে পেঁয়াজের দর কিছুটা কমলেও এখন আবার আগের মতোই ঊর্ধ্বমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ মানভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হয়। আর পেঁয়াজের ঝাঁজ না কমতেই বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝাল। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশি পেঁয়াজের মজুত এখন শেষের দিকে। ফলে বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। নির্ভর করতে হচ্ছে মিয়ানমার ও মিশর থেকে আসা পেঁয়াজের ওপর। কিন্তু মিয়ানমারের পেঁয়াজের মান ভালো না হওয়ায় এ পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ কম। এছাড়া যে পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে তা চাহিদার তুলনায়ও কম। তারা বলছেন, ভারত আগের এলসির (ঋণপত্র) করা পেঁয়াজ ছাড় করায় বাজারে মাঝে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছিল। কিন্তু নতুন করে আর ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে না।
উল্লেখ্য, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে গত মাসের শেষের দিকে পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন হয়ে যায়। এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। পরে সরকারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানসহ নানা উদ্যোগে দাম ৭৫ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে এলেও এখন আবার ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি।
এদিকে রাজধানীতে নেই শীতের ছোঁয়া। যারা উত্তরা এলাকার বাসিন্দা তাদের ভোরের দিকে একটু একটু শীত অনুভব হলেও হতে পারে। কিন্তু তাতে কি? রাজধানীর বাজারে আরো আগেই এসেছে শীতের সবজি। তবে দামটা চড়া। সবজি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রায় সারা বছরই অনেক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু শীতের সবজি বলতে আমরা যা বুঝি, সেই শিম, টম্যাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, ঢ্যাঁড়শ, মুলা, পালংশাক আসতে শুরু করেছে। নতুন আলু এখনো ওঠেনি। গতকাল শান্তিনগর ও কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।
গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টম্যাটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন, করল্লা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ, পটোল, ঝিঙে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পুরোনো আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোটো আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। সবজির দাম বেশি প্রসঙ্গে শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, প্রতি বছর এ সময়টায় বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক একটু কম থাকে। কারণ, এ সময় শীতের সবজি ওঠা শুরু করে। তিনি বলেন, আশা করছি, নভেম্বরে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন বছর জুড়েই অনেক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে শীতের সবজি খাওয়ার যে মজা তা অন্যসময় পাওয়া যায় না।
এদিকে ইলিশ মাছ ধরা ও বিক্রি বন্ধ থাকায় এর চাপ পড়েছে অন্য মাছের ওপর। গতকাল বাজারে চাষের পাঙাশ ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, রুই, কাতলা ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কোরাল ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন—৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এরপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। বাজারে উঠবে ইলিশ। তখন অন্যান্য মাছের দামও একটু কমে যাবে।