সাভার উপজেলারশিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এমন অভিযোগ উঠেছে সচেতন মহলে। অনেকেরই দাবি, সচেতনতার অভাবে বাড়ছে এসব চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ফিটিংবাজি, প্রতারণা ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ(ক্রাইম) বেড়েই চলেছে।
ছিনতাইকারির কবলে পড়েছেন সাংবাদিক লোকমান হোসেন চৌধুরী খোকা। ছিনতাইকারিরা তার কাছ থেকে নগদ টাকাসহ দুটি স্মার্ট ফোন ছিনিয়ে নেয়।
জানাযায়, শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় সাংবাদিক লোকমান হোসেন চৌধুরী খোকা ইতালি ফেরত তার চাচাতো ভাই কামাল হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে রাতে বাসায় ফিরছিলেন। তাকে নিয়ে রিকশা যোগে বাসায় ফেরার পথে আশুলিয়ার উত্তর গাজিরচটের আনারকলি মোড়ে পৌঁছালে সাদা রংয়ের একটি প্রোবক্স গাড়ি তাদের গতিরোধ করে। পরে গাড়ি থেকে ৫ জন অজ্ঞাত ছিনতাইকারী দেশীয় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের কাছে থাকা ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ২টি স্যামসাং স্মার্ট ফোন, ২টি ক্রেডিট কার্ড ও নগদ ২২ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ওই গাড়িযোগে বাইপাইলের দিকে পালিয়ে যায়।
ছিনতাইয়ের শিকার সাংবাদিক লোকমান হোসেন চৌধুরী খোকা দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি ও আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
১৪ ফেব্রয়ারি ২০২০ইং শুক্রবার আশুলিয়ার কাঠগড়া পালোয়ানপাড়া বাঁশ ঝাড়ের পাশ থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছেন আশুলিয়া থানা পুলিশ। এই লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘন্টা পর পুলিশ জানতে পারে ওই যুবকের বাড়ি রাজশাহী বাঘা থানার চুমুদিয়া গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে শামীম (২৮)। স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, উক্ত ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলের ২টি রক্তমাখা হেলমেটও একটি ছুরি উদ্ধার হয়েছে। এব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন গণমাধ্যম কর্মীকে জানান, এহত্যাকান্ডের শিকার পাঠাও চালকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, এঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে
অন্যদিকে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং রাত ৮টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়ার রূপায়ন আবাসন ১ এর মাঠের মধ্যে ছিনতাইকারীরা সুজন (২২) কাছ থেকে অস্ত্রেরমুখে ২০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে ছিনতাইকারীরা। একই রাতে ৪টার দিকে এক স্থানেই শফিকুল ইসলাম নামের কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে ছিনতাইকারীরা।
ভুক্তভোগীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই রূপায়ন মাঠে প্রতিনিয়ত ছিনতাই ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড করে থাকে। এখানে
গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপর ইউনিয়নের গোরাট এলাকায় এক নারী শ্রমিককে তুলে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় রাহিল মেম্বারের ইটভাটায় ৪-৫ জনের সহযোগিতায় রানা মিয়া (২৫) তাকে ধর্ষণ করেছে এমন অভিযোগ করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন ধর্ষিতা। ওই ধর্ষিতার অভিযোগের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গোরাট এলাকায় ডেবনিয়ার এ্যাপারেলস কারখানার সুইং অপারেটর পদে কর্মরত ওই নারী শ্রমিক তার এক সহকর্মীর সাথে বাসায় ফিরছিলেন, পথিমধ্যে রাহিল মেম্বারের ইটভাটার সামনে বখাটে রানা ও তার সঙ্গীরা জোরপূর্বক মেয়েটিকে তুলে নিয়ে ওই ইটভাটার ভিতরে তাকে ধর্ষণ করেছে রানা। এসময় ভুক্তভোগী নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন চলে আসলে রানাসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। এরপর রাতেই ওই নারী বিচার পাওয়ার আশায় মামলা করার জন্য আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) নাহিদ হাসান সাংবাদিকদের জানান, ভুক্তভোগী ওই নারী পোশাক শ্রমিকের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে আরো জানাযায়, উক্ত ধর্ষণকারী রানা গত বছরের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর জামগড়ার ছয়তালা ইয়ার্গী বাংলাদেশ পোশাক কারখানার নারী শ্রমিক নাজমা (১৬) গণধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত রয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় রানার বাবা আনা মিয়াও একজন নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করায় আদালতে মামলা রয়েছে। রানার বাবার ৩জন স্ত্রীর ৫ ছেলের মধ্যে রানা বড় ছেলে, এই পরিবারের বেশিরভাগ পুরুষদের চরিত্র খারাপ বলে এলাকাবাসীরা জানান। পুলিশের দাবি, অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা হয় কিন্তু আদালত থেকে তারা জামিনে এসেই আবার সেই অপরাধমূলক কর্মকান্ড করেন, এখানে পুলিশ কি করবে? জনসচেতনতার অভাবেই এসব ক্রাইম হচ্ছে। সবাই সচেতন হলে অপরাধমূলক কর্মকান্ড অনেকটা কমে যাবে। অন্যদিকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়, আর সেখানেও অনিয়ম, ওই রিপোর্টের ব্যাপারে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এরপর পুনরায় গত বছরের ৫ জানুয়ারি ২০১৯ইং আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন আবাসন ১ নং গেটের সামনে কাঁচামালের দোকানদার হানিফ এর মেয়ে পোশাক শ্রমিক নাজমা গণধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ্য হলে দুইদিন পর স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, নাজমা ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ৭ জানুয়ারি নাজমার মৃত্যুর পর থানায় মামলা হয়। এঘটনার সাথে জড়িত ২ জন আসামী এক রহিমকে জনতা আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন, ২ শিপনকে র্যাব-১ এর সদস্যরা গ্রেফতার করে আশুরিয়া থানায় সোপর্দ করেছেন। এই মামলার ওপর আসামী রিপন এর লাশ উদ্ধার করেন সাভার বিরুলিয়া এলাকা থেকে সাভার মডেল থানা পুলিশ। এ বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকেই।
ধর্ষণের শিকার নাজমা (১৬), আশুলিয়ার জামগড়া ইয়ার্গী বাংলাদেশ লিঃ নামের পোশাক কারখানায় চাকুরি দেন তার বাবা আবু হানিফ ২বছর আগে, তাহলে ১৪ বছর বয়সে নাজমার চাকুরি করতে হয়। এ বিষয়ে ইয়ার্গী বাংলাদেশ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মো.জাহাঙ্গীর আলম পাটোয়ারী বলেন, নাজমার চাকরি নেয়ার সময় অন্য একজনের কাগজপত্র দিয়ে বয়স বাড়িয়ে চাকরি নিয়েছিলেন, তার বয়স কম ছিলো তাই। নাজমা গণধর্ষণ ও মৃত্যুর পর তার বাবা হানিফ এর নামের সাথে নাজমুল নাম যোগ করে তার বাবাকে প্রথমে কয়েক হাজার টাকা দেয়া হয়, এর ৮ মাস পর আরও দুই লাখ টাকা দেয়া হয়েছে হানিফকে। মামলা সুত্রে জানা গেছে, ইয়ার্গী বাংলাদেশ লিঃ কারখানার কর্মকর্তারা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত। এই নাজমা গণধর্ষণ ও হত্যার সাথে উক্ত ধর্ষণকারী আনা মিয়ার বড় ছেলে রানা মিয়া জড়িত আছে বলে অনেকেই জানান। বাংলাদেশ শ্রম আইন সুত্র ৬৪৬ পাতায়ঃ (১) কোনো ব্যক্তি ধারা ১৯৫ বা ১৯৬ক এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে, অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। উক্ত ব্যাপারে র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীদের পরিবার।
আমাদের খবর / নিজস্ব প্রতিবেদক