নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাভার আশুলিয়ায় পাড়া মহল্লায় যেখানে-সেখানে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানা ও প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধান তথ্য দেখা যায়, বেশিরভাগ কারখানায় বিষাক্ত ক্যামিক্যাল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল খাদ্যপণ্য তৈরি করে তা বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে নকল ও ভেজাল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য মানুষের কাছে বিক্রি করায় এসব খাদ্যপণ্য খাওয়ার কারণে মানুষের দেহে নানারকম রোগ ব্যাধি দেখা দিচ্ছে বলে অনেকেরই অভিমত। গত এক মাস ধরে আমাদের প্রতিনিধি’র অনুসন্ধানে ভিত্তিতে এসব তথ্য পাওয়া যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাভার ও আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজার, নবীনগর, বাইপাইল, শিমুলিয়া ইউনিয়নের জিরানী বাজার, ধামসোনা ইউনিয়নের শ্রীপুর, ভাদাইল, পাবনারটেক, ইয়ারপুর ইউনিয়নের ইউসুফ মার্কেট, নরসিংহপুর, জামগড়ার টুইন টাওয়ার ও মধ্য গাজিরচট, কাঁঠালতলা বাজার এবং আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বেকারী ও মিষ্টির কারখানা এবং চানাচুর ফ্যাক্টারিসহ বেশিরভাগ খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানায় ক্যামিক্যাল মিশ্রিত খাদ্য সামগ্রী ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার উৎপাদন করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা, সেই সাথে ওজনে কম দিয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অস্বাস্থ্যকর ভেজাল খাদ্যপণ্য খাওয়ার কারণে মানুষের জীবনঝুঁকি রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এমনটি হচ্ছে বলে অনেকেরই অভিমত রয়েছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, সাভার উপজেলা এলাকা শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলার মানুষ কমবেশি রয়েছেন কর্মমুখি। যেমনঃ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নতুন মানুষের পথচলা, তেমনি অপরাধমূলক কর্মকান্ডও বেশি হয়ে থাকে এখানে। এতো বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও এসব এলাকায় অপরাধমুলক কর্মকান্ড কমছে না কেন? এর উত্তর অনেকের কাছেই অদৃশ্যমান। যেখানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, সেখানেও নকল ও ভেজাল। নিন্মমানের খাদ্য অবাধে বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা, দেখে মনে হয় নকল ও ভেজালের বাজার লাগছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলেতে এযেন দেখার কেউ নেই।
এছাড়া সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নকল ও ভেজাল ঘি, তৈল, বেকারীর খাদ্যপণ্য ও মিষ্টিজাত খাদ্যপণ্য তৈরি করে তা বিভিন্নস্থানে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দেখে মনে হয় নকল ও ভেজাল খাদ্যের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। প্রশাসন ভেজাল বিরোধী অভিযান চালিয়ে কিছু অসাধু লোকের প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও কিছু ব্যক্তিকে সাজা প্রদান করলেও তারা জেল থেকে বেরিয়ে এসেই পুনরায় আবারও সেই অপরাধ করছে। অনেকেই বলেন, জনগণ এখনো সচেতন নয়, অন্ধবিশ্বাস করে মানুষ খাদ্য খাবার খায়। এব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা’র ঢাকা জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম হেলাল শেখ বলেন, জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থা’র মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলে এতে মানুষ দেখে শোনে খাদ্যপণ্য কিনবে, ভালো বা খারাপ দেখে খাবার খাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি নকল ও ভেজাল খাদ্য তৈরি করে বা বিক্রি করে, তাদেরকে ধরে আইনশৃঙ্খা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন।
অন্যদিকে ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন নাম করা দেশী খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি অনেক এলাকায় ফাষ্টফুডের দোকানগুলোতে বিদেশী কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে, যার অধিকাংশের গায়ে কোনো ধরণের ট্রেডমার্ক, আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দেয়া থাকেনা এবং খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইয়ের গুনগত মান প্রমান করার কিছুই নেই। এমতাবস্থায় ভোক্তাদের কাছে পৌছানো হচ্ছে নকল, ভেজাল, নিন্মমানের বিষাক্ত খাদ্য সামগ্রী। এসব বেকারী ও মিষ্টিজাত খাদ্যপণ্যসহ সকল খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত না হলে শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষের অকালে মৃত্যু হতে পারে বলে অনেকেরই অভিমত। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।
উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নকল, ভেজাল ও নিন্মমানের খাদ্যপণ্য তৈরি করে যারা বাজারজাত করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, এটা বড় ধরণের অপরাধ। দেশে ভেজাল বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অপরাধী সে যেই হোক না কেন, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে, সেই সাথে অপরাধের ধরণ দেখে জেল জরিমানা করা হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।