অনলাইন সংস্করণ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে। হঠাৎ করে লকডাউনে বহু মানুষ নিজের ঘরবাড়ি থেকে দূরে আটকে পড়েছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোরে লকডাউনে আটকাপড়া ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসতে স্কুটারে করে এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিলেন তেলেঙ্গানার এক মা।রাজিয়া বেগম (৪৮) নামের ওই নারী একটানা তিন দিন স্কুটার চালিয়ে ছেলেকে বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসেন। পুলিশের অনুমতি নিয়ে সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে এই দুঃসাধ্য যাত্রায় বের হয়ে বুধবার তার সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমকে রাজিয়া বলেন, ‘একটি ছোট দু-চাকার গাড়িতে একা একজন মহিলার পক্ষে এই সফর করা মোটেই সহজ ছিল না। তবে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেই হবে, আমার এই অদম্য ইচ্ছার সামনে সব ভয় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। আমি সঙ্গে শুধু কয়েকটি রুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। রাতে যানজট নেই, রাস্তায় কোনো লোক নেই, যদিও রাস্তাঘাট এত ফাঁকা থাকায় ভয়-ভয় করছিল, তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে স্থির ছিলাম’।
রাজিয়া হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে নিজামবাদে একটি সরকারি স্কুলে চাকরি করেন। ১৫ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একা হাতেই জীবনযুদ্ধে লড়ে চলেছেন তিনি। তার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন(১৫), যাকে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন।
নিজামুদ্দিন কিছুদিন আগেই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং এখন তিনি এমবিবিএসের প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করার জন্যে বিশেষ কোচিং নিচ্ছেন। তিনি গত ১২ মার্চ নেল্লোরের রহমতবাদে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় সেখানে আটকে পড়েন।
ছেলের এই অবস্থা দেখে রাজিয়া বেগম ঠিক করেন যে তিনি ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। পুলিশের ভয়ে তিনি বড় ছেলেকে না পাঠিয়ে নিজেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ৬ এপ্রিল সকালে তিনি তেলেঙ্গানার বাড়ি থেকে বের হন, সারাদিন স্কুটি চালিয়ে পরদিন বিকেলে নেল্লোর পৌঁছান। তারপর সেখান থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। বুধবার সন্ধ্যায় ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছান তিনি। সূত: এনডিটিভি