যশোরের চৌগাছার জামিরা গ্রামে মা হারা শিশু আঁখি (৭) ঠিক মতো খেতেও পায় না। মায়ের স্নেহ বঞ্চিত শিশুটি তাই খাবারের জন্য এদিক ওদিক চলে যায়। এই অবস্থায় অসুস্থ দাদা তার শারীরিক ক্ষতি হবার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে শিকলবন্দি করে ঘরে রেখেছেন। ফলে ধীরেধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ফুটফুটে শিশুটি। শিশুটির দেখভাল করার জন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন জামিরা গ্রামে গেলে শিশু আঁখির করুণ কাহিনীর দৃশ্য চোখে পড়ে। মাটি ও বেড়া দিয়ে তৈরি ঠোট্ট ঘরে নির্বাকভাবে বসে আছে। একটি খুঁটির সাথে তার বাম পা শিকল দিয়ে বাঁধা। গায়ে কোনো জামা নেই। মলিন একটি প্যান্ট পরা। মন খারাপ করে বসে আছে সে। কোমল চোখদুটি ছলছল। এ সময় বিমর্ষ ও অসুস্থ দেখাচ্ছিল শিশুটিকে।
আশপাশের লোকজন জানান, গ্রামের দরিদ্র আশরাফুল ইসলাম ও ফুলবানুর মেয়ে হচ্ছে আঁখি (৭)। আঁখির বয়স যখন ৭ মাস তখন পিতামাতার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বর্তমানে মা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছে। বাবা আশরাফুল ইসলাম রিকশা চালক। জীবিকার সন্ধানে প্রতিদিন গ্রাম থেকে যশোর শহরে চলে যায়। দিনের পরিশ্রম শেষে সে রাতে বাড়ি ফেরেন। তারপরও মেয়েকে ঠিকমতো দেখাশুনা করে না বলে স্থানীয়রা জানান। ছোটবেলা থেকে দাদা-দাদী আঁখিকে দেখাশুনা করতেন। কিন্তু দাদী প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। দাদাও খুবই অসুস্থ। পাশের মসজিদের মোয়াজ্জেম। বয়সের ভারে তিনি কাজকর্ম করতে পারেন না।
আঁখির এই অবস্থার কথা জানতে চাইলে বৃদ্ধ দাদা চোখের পানি ফেলে বলেন, আঁখির ভাগ্যটাই খারাপ। আঁখির যখন ৩ বছর বয়স, তখন ওর আব্বার সাথে পৃথক হয়ে যায়। ও এখন ধীরেধীরে বড় হচ্ছে। ঠিকমত খাবার দিতে পারি না। তাই বাড়ির বাইরে যেয়ে লোকের কাছে খাবার চাই। ওর ‘শরীলের’ ক্ষতি হবে জেনে আমরা বাধ্য হয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি। ও এখন ধীরেধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন কি করব? ওকে দায়িত্ব নেয়ার মতো আমার ক্ষমতা নেই।
গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আঁখি দেখতে সুন্দর ও খবু চঞ্চল। সহজে যেকোনো লোকের সাথে মিশে যায়। অভাবের কারণেই সে বাড়ি থেকে বের হয়ে চেয়ে চিন্তে লোকজনের নিকট থেকে খাবার খায়। মূলত শিশুটির দেখাশোনার কোনো লোক নেই। সেকোনো সময় শিশুটির ক্ষতি হতে পারে।প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন জানান, আঁখির দাদী পঙ্গু। দাদা অসুস্থ। পিতাও কোনো খোঁজখবর নেয় না। আঁখির দ্রুত চিকিৎসা হওয়া দরকার। এভাবে শিকলে বন্দি থাকলে ও মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলবে। শিশুটির করুণ খবরে স্থানীয় হাসিব ইলেকট্রনিক্সের মালিক হাসিবুর রহমান হাসিব আঁখির জন্য কিছু খাবার, বই ও পোশাক সামগ্রী পাঠিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি মাসুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। শিকল দিয়ে শিশুকে বেঁধে রাখা অমানবিক। আমি এখনই খোঁজখবর নেব। বৃদ্ধ দাদা-দাদী যদি সম্মতি দেয় তাহলে শিশুটির সকল দায়িত্ব আমি গ্রহণ করব। আর যদি সম্মতি না দেয় তাহলে মাসিক কিছু টাকা আমি দেব।
তিনি বলেন, বর্তমান সভ্য সমাজে বসবাস করে যদি শিশুসহ যেকোনো মানুষকে শিকলে বন্দি থাকতে হয় তাহলে এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এমন ঘটনা ঘটতে দেয়া যাবেনা। বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে দেখছি