পরকীয়া সম্পর্কের জেরে নিজের সাবেক ছাত্র আজহারকে (৩০) হত্যা করে ছয় টুকরো করেছেন রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আব্দুর রহমান। এই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তারও। ঘটনার পাঁচ দিন পর আজহারের লাশ একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল সকালে ইমাম আব্দুর রহমান ও বিকেলে আসমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
দিবাগত রাত ১২টার সময় র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান।আসমাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মো. আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, ‘আসমা আক্তারের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল মো. আব্দুর রহমানের। এ পরকীয়া সম্পর্কের জেরে আসমা এবং আব্দুর রহমান দুজনে মিলে পরিকল্পনা করতে থাকেন, কীভাবে আজহারকে হত্যা করা যায়। প্রথমে আসমা আক্তার আব্দুর রহমানকে লোকজন দিয়ে আজহারকে হত্যা করার কথা বলেন। কিন্তু হত্যায় কোনো প্রমাণ রাখতে চাননি ইমাম। ফলে তিনি চেয়েছিলেন একাই হত্যা করতে।’
র্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘পরে ইমাম ও আসমা দুজন পরামর্শ করে আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা সাজায়। ঈদে টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়ি ছিলেন আসমা ও তার স্বামী আজহার। ঈদের পরে একটি কাজের কথা বলে আসমা আজহারকে দ্রুত ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় আসার পর মাওলানা মো. আব্দুর রহমান আজহারকে মসজিদে ডেকে নেন। তারপর মসজিদের ভেতরে ইমামের থাকার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় আজহারকে। সেখানে নিয়ে আব্দুর রহমান তাকে ধারালো অস্ত্রের কোপ দেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তারপর রাতভর লাশ ছয় টুকরো করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাওলানা মো. আব্দুর রহমানকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করে র্যাব। ৩৩ বছর ধরে দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে ইমামতি করেন আব্দুর রহমান। পাশাপাশি শিশুদেরকে কোরআন শিক্ষাও দেন তিনি। গত বুধবার রাতে তিনি তাঁর সাবেক ছাত্র আজহারকে (৩০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র্যাব সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে আজহারের লাশের ছয় খণ্ড গলিত অংশ।
এরপর বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম ইমামকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, ‘আটক আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, অভিযুক্তের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কারণ, ভুক্তভোগীর ছেলে মো. আরিয়ান (৪) ওই মসজিদের মক্তবে পড়তে যেত। শুধু তাই নয়, আজহারও ইমাম আব্দুর রহমানের কাছে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম প্রায়শ আজহারের বাসায় যেতেন।’
র্যাবের অধিনায়ক আরও বলেন, ‘গত ১৯ মে অর্থাৎ বুধবার রাতে আজহার মসজিদে যান। তারপর ইমামের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়। ইমাম আমাদের বলেছেন, আজহার এসে অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে তিনি নাকি পরকীয়া করেন। অথচ এটি মিথ্যা অভিযোগ। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজহারকে কোপ দেন ইমাম আব্দুর রহমান। এতে আজহার ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে ঘটনা লুকাতে তিনি লাশ টুকরো করেন।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, ‘মো. আব্দুর রহমান স্বীকার করেছেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি একাই আজহারকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা আজহারের স্ত্রীকে আজ হেফাজতে নিয়েছি। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে আর কোনো মোটিভ আছে কি না তা জানার চেষ্টা করছি আমরা। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’