নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী বলে জানা গেছে।
শনিবার (২৯ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। সবাই ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সবাইকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর মধ্যে চরকাঁকড়ার মৃত মোস্তফার ছেলে মাঈন উদ্দিন কাঞ্চন (৪২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সামছুল হকের ছেলে সবুজের (৪০) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘শুক্রবার পুরো বসুরহাটে মিছিল হয়েছে তাতে কেউ কোনো শব্দও করে নাই।
কিন্তু আজ সন্ধ্যায় ইউএনও, ওসি, এসি ল্যান্ড ও এডিশনাল এসপি শামীমের সামনে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমার নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেন।
এতে আমার ১৫ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। ওসি এবং এডিশনাল এসপি শামীম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আর ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড তখন উপজেলা অফিসে উপস্থিত ছিলেন।’
এ বিষয়ে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ তারই ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু বলেন, ‘আমার কোনো লোক বাসা থেকে বের হয়নি। তারা নিজেরাই মিছিল করতে এসে সংঘর্ষে গুলিতে আহত হয়েছেন।’
হাসপাতালের ডাক্তার আবু নাছের জানান, ছররা গুলিতে আহতদের জরুরি বিভাগ থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহতরা হলেন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (৪৭), ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ জিসান (২৩), মৃত মোস্তফার ছেলে মাঈন উদ্দিন কাঞ্চন (৪২), সামছুল হকের ছেলে মো. সবুজ (৪০), আবদুল লতিফ দুলালের ছেলে রুহুল আমিন সানি (৩০), মোস্তফা মেস্তরীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৮), মো. নওশাদ (৩৫) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনামুল হকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন সুমন (২৭) এবং চরকাঁকড়ার মোশারেফ হোসেনের ছেলে দিদার (৩৫)।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া, আদর্শপাড়া ও শান্তিপাড়া থেকে কাদের মির্জার অনুসারীরা একত্র হয়ে পৌরসভায় যাওয়ার জন্য জড়ো হচ্ছিলেন।
এ সময় প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ মঞ্জুর সমর্থকরা বেপরোয়া গুলি করে তাদের লোকজনকে আহত করেন।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাদের মির্জার অনুসারীরা মিছিল করতে চাইলে প্রতিপক্ষরা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন গোলাগুলির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজকে গোলাগুলি হয়েছে। তবে কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। ওই পৌরসভায় দ্বিতীয় মেয়াদে গত ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে আলোচনায় আসেন তিনি।
স্থানীয় রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে দলীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধের ঘটনায় ১ মাসে দু’টি সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ৩১ মার্চ দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন কাদের মির্জা। পদত্যাগের ৪৫ দিনের মাথায় ১৬ মে কাদের মির্জা আবার দলে ফিরেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হন।