করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশ থেকে নয় দিনের জন্য রাজধানী ঢাকা প্রায় বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলাসহ দেশের মোট সাতটি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এসব জেলায় আগামী নয় দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে এসব জেলায় পণ্যবাহী ছাড়া সবধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার এবং ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে।
এই সময়ে ঢাকা থেকে দূর পাল্লার বাস চলবে না। কারণ ঢাকার আশপাশের যেসব জেলার ওপর দিয়ে অন্যান্য জেলায় দূর পাল্লার বাস চলাচল করে সেগুলোতে চলাচলে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার পাশের জেলাগুলো হলো, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জেলাগুলোর যানবাহন চলাচল করে। আর নারায়ণগঞ্জের সীমানার ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের গাড়ি চলাচল করে।
গাজীপুরের ওপর দিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের গাড়ি চলাচল করে। আর মুন্সিগঞ্জের ওপর দিয়েও চলে বিভিন্ন জেলার গাড়ি। এ ছাড়া মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জেও বিধিনিষেধ থাকবে।
এ বিষয়ে সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাকে আমরা কয়েকদিনের জন্য অন্য জেলাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চাই। এ লকডাউন চলাকালীন সবকিছু বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না।
এ সময়ে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা যেমন কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা , কোভিড ১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ,পানি, গ্যাস/জ্বালানি,ফায়ার সার্ভিস বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট,গণমাধ্যম বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ ,তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এর বাইরে আরও কোনো জেলা যদি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে জেলা প্রশাসন লকডাউন দিতে পারবে।ঘোষণা অনুযায়ী রেল, আকাশ ও নৌপথের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ না থাকায় ও এসব যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকায় আসা যাবে। তবে যে জেলাগুলোতে লকডাউন করা করেছে সেখানে থাকবে না রেল ও লঞ্চ।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে যেসব ট্রেন চলে সেগুলো বন্ধ থাকবে। কিন্তু দূরের যাত্রার ট্রেনগুলো যথারীতি চলবে।চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার।
পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক বসিয়ে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বিধিনিষেধে আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া ছিল। এ ছাড়া জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া যথারীতি অফিস সীমিত পরিসরে চলছে। আর সীমিত পরিসরে হচ্ছে ব্যাংকের লেনদেন।
সবশেষ, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। গত ১৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়।