৭ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। জরুরি সেবা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। বিধিনিষেধ চলাকালে এবার কোনো মুভমেন্ট পাস থাকবে না। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠোর অবস্থানে না যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা সারা দেশের স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ভিডিও প্রেজেন্টেশনে দেখছি দেশের একটা বড় অংশ করোনা সংক্রমণের রেড, অরেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। কিছু বাস্তব কারণে ৩০ জুন পর্যন্ত করতে পারছি না। তবে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হবে।
এবার আমরা খুবই কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও বিজিবি। তারা টহলে থাকবে। তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কারও বের হওয়া যাবে না, বাসায় থাকতে হবে সবাইকে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া বা বিদ্যুৎ, পানি এসব জরুরি সেবা সেগুলো চলবে। তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জে লক করে দেওয়ায় সংক্রমণ অনেক কমে গেছে।
সাতক্ষীরায়ও পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে যেখানে আমরা আইসোলেটেড করে দিয়েছি মুভমেন্ট রেস্ট্রিক্টেড করে দিয়েছি সেখানেই কমেছে। এখন ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই এরপর সরকার যদি মনে করে আরও সাত দিন দিতে হবে, সেটাও বিবেচনায় আছে। পোশাকশিল্প বা রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আবার বসা হবে। বিস্তারিত নোটিস দিয়ে জানানো হবে।
বিধিনিষেধে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেবিনেট বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় যথাসম্ভব গত বছর যেটা করা হয়েছে সেটা চালু রাখতে।
বিশেষ করে শহর এলাকায় বেশি সমস্যা হয়, সেটাকে নজরদারিতে রেখে যথাযথ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব থাকবে।
আর্মি, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন পুলিশ তারা সবাই টহলে থাকবে। তাদের যতটুকু সম্ভব যা দরকার, সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অথরিটি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যাতে কোনোভাবেই বেশি মানুষ বের হতে না পারে। কেউ কথা না শুনলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে।
এবার কোনো মুভমেন্ট পাস থাকছে কি না জানতে চাইলে বলেন, থাকবে না। এবার কোনো মুভমেন্ট পাস থাকবে না। কেউ বের হতে পারবে না। সাত দিন সবাই ঘরে থাকবে।
অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ বা লকডাউনে দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দিতে ৬৪ জেলার অনুকূলে ২৩ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
শর্তানুযায়ী জেলা প্রশাসকরা বরাদ্দ করা টাকা ইউনিয়নওয়ারি দেবেন। ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের এই বরাদ্দ থেকে খাদ্য সহায়তা, যেমন চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু ইত্যাদি প্রদান করতে হবে।
সীমান্ত আরও ১৪ দিন বন্ধ : বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্তে সব ধরনের যাতায়াত আরও ১৪ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত অষ্টম আন্তমন্ত্রণালয় সভায় গতকাল এ সিদ্ধান্ত হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা শাখা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি এবং সীমান্ত জেলাগুলোর প্রশাসকরা অংশ নেন। সভার সিদ্ধান্ত মতে, ১৪ জুলাই পর্যন্ত সীমান্তের সব স্থলবন্দর বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে অনুমতি সাপেক্ষে চলাচল করা যাবে। পণ্য পরিবহন আগের নিয়মে চলবে।