মিজানুর রহমান, সিংগাইর :
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে শতবর্ষী বয়সের ভিটেমাটিহীন ময়নার জীবন জীবিকা চলছে চরম দুর্বিষহ ও অবহেলার মধ্য দিয়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজড়ে না পড়াতে বর্তমান সরকারের ভিটেমাটিহীনদের তরে আশ্রায়ণ প্রকল্পের সুবিধা হতে তিনি বঞ্চিত।এতে করে সরকারের মহৎ উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকেই।
শতবর্ষী এই ময়না সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা গ্রামের মৃত অন্ধ সাহেব আলী বয়াতির স্ত্রী। প্রায় দেড়যুগ আগে সাহেব আলী বয়াতী মারা গেলে দুই রিক্সাচালক ছেলে জিন্নত আলী (৫০) ও জন্টু মিয়া (৪২) তার ভরণ পোষণ করছেন। তাদেরও নেই ভিটেবাড়ি। বয়সের ভাড়ে কুজো হয়ে পড়া বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তারা তাদের পৈত্রিক বাবার ভিটেমাটির পাশেই এখলাছ উদ্দিন বয়াতীর বাড়িতে দীর্ঘ দিন যাবৎ ভাড়া থাকছেন।
সাহেব আলীর বড় ভাই জারি গানের সম্রাট ইউসুফ আলী বয়াতী ছিলেন ৭০, ৮০, ও ৯০ দশকের দিকে দেশের বেশ খ্যাতিমান গুণী বাউল শিল্পী। অন্ধ সাহেব আলী ছিলেন তার প্রধান দোহারী। দেশের বিখ্যাত সাধক, কবি ও বাউল সম্রাট আ: রশিদ সরকারসহ পরশ আলী দেওয়ান, বড় আবুল সরকার, মাতাল কবি রাজ্জাক দেওয়ান, মালেক সরকার, ননী ঠাকুরসহ ঐ সময়কার জনপ্রিয় সব বয়াতিরা এ অন্ধ দোহারি সাহেব আলীর প্রতিভা দেখে তাকে ভালোবাসতেন।
বর্তমানে তার পরিবারের এ চরম অবস্থায় স্থানীয় এমপি গানের পাখি মমতাজ বেগম তাদের জন্য কিছু করবেন বলে সবাই আশা ভরা নয়নে অপেক্ষমাণ। ময়না বিবির বড় ছেলে রিক্সাচালক জিন্নত আলী বলেন, বাবাজি আমিও অসুস্থ, প্রায় ৬ বছর আগে মারাত্মক রোড এ্যাক্সিডেন্ট করার পর এখন আর আগের মত রিক্সা চালাইতে পারিনা। যা আয় করি তাই মাকে নিয়ে খাই।
আমরা কোন দিনই জমি কিনা বাড়ি করবার পারমু না। অনেকের কাছে শুনি সরকার থেইক্যা নাকি জমিসহ ঘরবাড়ি দিতেছে। আমার খুব কষ্ট হয় আমাগো থেইক্যাও দু:খি মানুষ আছে শুইনা। ময়না বিবি বলেন, যদি মারা যাবার আগে নিজের ঘরে মরতে পারতাম তবে সেটা হত শান্তির মরা।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, তাদের যদি কোন ভিটেমাটি না থেকে থাকে অবশ্যই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। তাদেরকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধা দেয়া হবে ইনশাহ্ আল্লাহ।