২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সব আইনি বিধিবিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব এ রায় কার্যকর হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমিতে পরিণত হবে।একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সালের এই দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা; আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা।কিন্তু আল্লাহর রহমত ও জনগণের দোয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেন। তবে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন ৫ শতাধিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী। তাদের অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এবং অনেকে শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
একুশে আগস্টের শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান শেখ হাসিনা। বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যখনই সরকারে এসেছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা করেছে। ২০০১ সালে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একের পর এক বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। এ নারকীয় হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হত্যাকারীদের রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা করেছিল। হামলাকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ সব আলামত ধ্বংস করে। তদন্তের নামে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে।
রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায়। কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকেনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক কুশীলব এ হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
নারকীয় ওই হামলা মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়। আদালত গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ১১ আসামির। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সব অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণ ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা এক যুগের সাফল্যের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, গত সাড়ে ১২ বছরে সরকার দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। বর্তমান প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনো নানাভাবে সোচ্চার আছে। এই অপশক্তির যে কোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য জনগণকে সব সময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।