দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আটক সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সারোয়ার কবীরসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মন্ডল তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া বাকি আসামিরা হলেন- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান উল ফারুক, ফসিউল আলম পলাশ ও হাবিব মিয়া।
এর আগে, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুলিশের দুটি পিকআপভ্যানের পাহারায় একটি মাইক্রোবাসে তাদের আদালতে আনা হয়।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর স্বজন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত ৯টার দিকে চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেডাই গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ফিল্মি স্টাইলে মাইক্রোযোগে অপহরণ করা হয়।
এ সময় মা ও ছেলেকে মারপিটও করেন অপহরণকরীরা। সন্তানসহ জহুরা বেগম নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাড়ির লোকজন র্যাব, ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকের বিষয়ে খোঁজ নেন।
কিন্তু কেউ আটকের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে তাদের জানান। পরে অপহরণকারীরা মোবাইলে জহুরা বেগমের স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজানের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ এবং পরে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
কথমতো মঙ্গলবার বিকেলে হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মুক্তিপণের টাকা দিতে যান স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজান আলী। তদের সঙ্গে সিভিল পোশাকে পুলিশ রয়েছে টের পেয়ে অপহরণকারীরা মাইক্রোবাস নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
এ সময় ১০ মাইল নামক স্থানে পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। অভিযানে জেলা পুলিশ ও চিরিরবন্দর থানার পুলিশ অংশ নেয়। ঘটনার পর তাদের ডিবি অফিসে রাখা হয়।
অপহৃত মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকেও ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়। বুধবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ বিষয়ে বুধবার দিনব্যাপী দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকের কাছে মুখ খোলেননি। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামে এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের গাদুশা পাড়ার জনৈক চ্যালেঞ্জ মৌলানার ছেলে লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ আনেন।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার দিবাগত রাতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার কবির সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান উল ফারুক, ফসিউল আলম পলাশ ও হাবিব মিয়া লুৎফরের বাড়িতে যান। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভিযুক্তরা কোনো প্রকার অনুমতি না নিয়ে সেখানে (চিরিরবন্দর) গেছেন। তাদের আটকের বিষয়টি শুনেছি। তারা কেন সেখানে গেছে, কাকে অপহরণ করেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।