জেলা প্রতিনিধি
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান পশ্চিম বাসুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সফল প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক চাকুরি হতে অবসরকালীন বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলার পশ্চিম বাসুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আয়োজনে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাককে চাকরি অশ্রুসিক্ত হয়ে গলায় মালা, উপহার ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। জীবনে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার অনন্য এক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন আলোকিত মানুষ গড়ার এ কারিগর। দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়েছে তাকে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, খানসামা উপজেলা হতে ৫কি.মি. দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বাসুলী গ্রামে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রসারের জন্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব আঃ রাজ্জাকের উদ্যোগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১.০৫ একর জমির ওপর ১৯৯৩ সালে পশ্চিম বাসুলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এলাকার লোকের সহযোগিতায় বাঁশ, খড় ও কাঁশঝাড়ের ঘর করে বিদ্যালয় শুরু করলেও এখন আঃ রাজ্জাকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য করেছেন পাকা ভবন, অডিটোরিয়াম, খেলার মাঠ সহ প্রভৃতি স্থাপনা।
বিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলেছেন ছোটখাট একটি পার্কের মত। ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বয় ও গার্ল কর্ণার। এছাড়াও সততা ষ্টোর, স্টুডেন্টস ক্যাবিনেট, স্কাউট দল, অভিভাবক সমাবেশ, নিয়মিত হোম ভিজিটসহ জাতীয় দিবস গুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বই পড়ায় উৎসাহিত করার জন্য বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছেন একটি কার্যকরী লাইব্রেরি। যা থেকে ২৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র হতে পুরস্কৃত হয়েছেন।
এই প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তি উদ্যোগে বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি বির্তক, কুইজ, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, রচনা, চিত্রাংকন, ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ সাপেক্ষে বিভিন্ন স্থান অধিকার করে। বিশেষ করে ভলিবল খেলা ও কুচকাওয়াজে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল।
বিদ্যালয়টিতে প্রথম ১৯৯৮ সালে ৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সর্বশেষ ২০২০ সালে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৯৮-১০০% পাশ ও ৭-১০ জন করে শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন পদস্থ কর্মকর্তা এ বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ছিল।
ব্যক্তি জীবনেও এ প্রধান শিক্ষক সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি ব্যক্তি জীবনে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। তিনি উপজেলা দূর্নীতি দমন কমিটির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও এাকাধিক বার তিনি উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে পুরস্কৃত হন। তাঁর স্ত্রী পশ্চিম বাসুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা শাহানাজ পারভিন। তাঁর দুই ছেলেই টেক্সটাইল প্রকৌশলী। বড় ছেলে তাকি আল বান্না জার্মানীতে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পর বর্তমানে সেখানেই চাকুরি করছেন। আর ছোট ছেলে রাজিআল ফারাবী একটি বিখ্যাত পোশাক কোম্পানিতে সহকারী মার্চেডাইজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এই মহান শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বের অধিকারী পশ্চিম বাসুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের চাকুরি হতে অবসরকালীর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাতেম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভিন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজমুল হকসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক, শিক্ষার্থীবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।