দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় রোপা আমন ধানে দেখা দিয়েছে পাতা মোড়ানো মাজরা ও পচানি রোগ। পোকার আক্রমণে দিনদিন পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ধান রক্ষায় কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৩ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আর কয়েকদিন পরে গাছে ধান আসার কথা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না কৃষকরা। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকা আর পোকা।
পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক এনে জমিতে স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমনের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। তাদের আশঙ্কা, সময় মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে। সরেজমিনে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, তার প্রায় ৮ বিঘা জমিতে পোকা আক্রমণ করেছে। কীটনাশক স্প্রে করেও এই পোকা দমন করা যাচ্ছে না। এ যাবত ৩ বার স্প্রে করা হয়েছে। প্রতিবার স্প্রে করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৭/৮ শত টাকা করে খরচ হচ্ছে।
তার মতো বালাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক মনছুর আলী, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সমছেদ আলী, আজিজ আলী, আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামের গোলাম রব্বানী, গোয়ালডিহির বাবু ইসলামসহ অনেকেই জানালেন তাদের জমিতে পোকার আক্রমণের কথা। তারা বলেন, সুদে ঋণ নিয়ে এবার আমন ধান চাষ করেছেন অনেকে। ধান বের হতে না হতেই পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকা ধান গাছের পাতা খেয়ে বিবর্ণ করে ফেলছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ. ম. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ধানগাছের হলুদ বর্ণ রোধে ও পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পোকা দমনে ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিতকরনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বাসুদেব রায় বলেন, দিনের বেলায় প্রচন্ড তাপমাত্রা আর রাতে কুয়াশা হওয়ার কারণে সম্প্রতি ধান ক্ষেতের পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া কৃষকরা ধান ক্ষেতে কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সময় মত না করার কারণে পোকার আক্রমণ হচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকদের অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।