গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সরকারী জমি জবর-দখল করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণে বাধা দিতে গিয়ে বার বার হামলার শিকার হচ্ছেন ভুমি অফিস ও বন বিভাগের লোকজন।
এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরাও। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা, ৩টি পরিচয়পত্র, দুটি ল্যাবটব ও ১টি ক্যামেরা।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বন বিভাগ পক্ষ থেকে কয়েকটি বন মামলা, উপজেলা নিবার্হী কার্যালয় ও থানায় পৃথক দুটি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ১টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এলাকাবাসী, ভুমি অফিস ও বন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালা গেসুরটেক এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মৌচাক বিট অফিসের আওতায় ওই এলাকায় বনবিভাগের প্রায় ১০ একরের বেশি বনের জমি রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু দিন দিন ওই জমিতে নিমার্ণ করা হচ্ছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় ইয়াছিন, শাহিন, মানিক, আঃ বারেক, আমির মুন্সি, হামিদ মোল্লা, ময়নাল, সিরাজ, শাহ আলম, জাকির, নাছির, ডেইজি আক্তারসহ ১৪/১৫ জনের একটি ভুমিদস্যূ সিন্ডিকেট দল তৈরি করে বন বিভাগের জমি দখল করে আসছে। পরে তারা চুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ওই জমিতে অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণ বাবদ ৫০হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেয়।
এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বনের জমি প্লট করে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এরপর ভুমিদস্যূ সিন্ডিকেট দল ওই টাকা গুলো ভাগ-ভাটোয়ারা করে। বনবিভাগের লোকজন এসব অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণে বাধা দিতে গেলে ওই ভুমিদস্যূ সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন।
সম্প্রতি ওই ভুমিদস্যু চক্রের সাথে মোটা অংকের টাকা চুক্তির মাধ্যমে বনের জমিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ১৫/২০টি অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণ করা হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে গত বুধবার সকালে বনবিভাগের লোকজন সেখানে গিয়ে অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণে বাধা দেয়। মুহুর্তের মধ্যে ওই ভুমিদস্যূ সিন্ডেকেটের দল তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করে। তাদের হামলায় মৌচাক বিট কর্মকতার্সহ ওই অফিসের ৭জন আহত হন।
এ ঘটনায় বিট কর্মকর্তা মশফিকুর রহমান মানিক বাদী হয়ে ২৬জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০/৩৫ জনের নামে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে সফিপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিস ও মৌচাক বিট অফিসের লোকজন সেখানে যান। কিন্তু সেখানে পৌছানো মাত্রই আবারও ওই ভুমিদস্যু সিন্ডেকেট দল স্থানীয় বেশকিছু লোকজন নিয়ে ভুমি ও বন অফিসের লোকজন অবরুদ্ধ রেখে হামলার চেষ্টা করে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ৭/৮ জন সাংবাদিক সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগেই পুলিশ গিয়ে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এসময় তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা সেখানে পৌছানো মাত্রই ওই ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট দল তাদের উপর হামলা চালায়। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার ৩৫০ টাকা, ৩টি পরিচয়পত্র, ডেল কোর আই-৫ দুটি ল্যাবটব ও ১টি সনি ক্যামেরা। আহত হন ৫জন সাংবাদিক। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিলে মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় বন অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সফিপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের নায়েব আব্দুল আলীম জানান, প্রকৃতপক্ষে বনের জমি কিনা? বিষয়টি দেখতে উপজেলা ভুমি অফিস আমাদের সেখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়া মাত্রই আমাদের অবরোদ্ধ করে ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট দল।
মৌচাক বন বিটের কর্মকর্তা মশফিকুর রহমান মানিক জানান, ওই বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণে যতবার বাধা দিতে গিয়েছি, ততবারই হামলার শিকার হয়েছি।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, বন বিভাগের লোকজন ও সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, ইতিমধ্যে বিষয়টি অবগত হয়েছি। তবে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল করিম জানান, বন বিভাগের লোকজনের উপর হামলার বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।