জার্মান ডাক বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জে. হাইনরিখ ফন স্টিফেন ১৮৬৮ সালে একটি পোস্টাল ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং প্রস্তাব আকারে জার্মান সরকারের কাছে পেশ করেন।
প্রস্তাবের সূত্র ধরে জার্মান সরকারের উৎসাহে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ১৮৭৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২২টি দেশের ডাক বিভাগ একত্রিত হয়ে একটি সম্মেলন করে।
সম্মেলনের শেষ দিন ৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় জেনারেল ইউনিয়ন অব পোস্ট। ১৮৭৮ সালে জেনারেল ইউনিয়ন অব পোস্ট পরিবর্তন করে বিশ্ব ডাক সংস্থা করা হয়।
বিশ্ব ডাক সংস্থা গঠনের পর যে কোনো রাষ্ট্র থেকে পাঠানো চিঠি অন্য রাষ্ট্র বিনা মাশুলে গ্রহণ করে। এর আগে একটি চিঠি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো হলে যতগুলো দেশের ভেতর দিয়ে যেত, সেসব দেশের ডাকটিকিট খামে লাগাতে হতো। এতে করে ডাক বিভাগকে পোহাতে হতো অনেক ঝামেলা।
১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৬তম অধিবেশনে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৯৮৪ সালে জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসকে করা হয় বিশ্ব ডাক দিবস। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল ইউনিয়ন অর্থাৎ বিশ্ব ডাক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে।
এরপর থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রতি বছর ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। এ বছরও বিশ্ব ডাক দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
ডাক বিভাগের কাছে বিশ্ব ডাক দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৮টি বিশেষ খাম ও ৮টি সিলমোহর, ১৪টি বিশেষ সীলমোহর, ১০টি স্মারক ডাকটিকিট, দুটি সুভেনির শিট ও চারটি উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করেছে। প্রথম ১৯৭৪ সালের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক সংস্থার শতবার্ষিক উপলক্ষ্যে ২৫ পয়সা, ১ টাকা ২৫ পয়সা, ১ টাকা ৭৫ পয়সা ও ৫ টাকা মূল্যমানের চারটি স্মারক ডাকটিকিট ও ৮ টাকা ২৫ পয়সা মূল্যমানের একটি সুভেনির শিট প্রকাশ করে। এটি বাংলাদেশের প্রথম সুভেনির শিট।
ডাকটিকিট ও সুভেনির শীটের নকশা করেন কে জি মুস্তাফা এবং মুদ্রাকর ইংল্যান্ডের মেসার্স ব্রাডবুরি উইলকিনসন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক সংস্থার ১২৫তম বার্ষিক উপলক্ষ্যে ৪ টাকা মূল্যমানের দুটি ও ৬ টাকা মূল্যমানের দুটি মোট চারটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ২৫ টাকা মূল্যমানের একটি সুভেনির শিট প্রকাশিত হয়। ডাকটিকিটগুলোর নকশাকার হলেন আনোয়ার হোসেন, মতিওর রহমান ও মো. সামসুজ্জোহা।
সুভেনির শিটের ডিজাইনার ড. কাজী শরীফুল আলম এবং মুদ্রাকর দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, গাজীপুর। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৪৫তম বার্ষিকে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। এই ডাকটিকিটের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটি হলো ডাকটিকিটের ডিজাইন বিশ্ব ডাক সংস্থা থেকে পাঠানো হয় এবং একই নকশায় বিশ্ব ডাক সংস্থার সমস্ত সদস্য দেশ থেকে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষ্যে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে, যার ডিজাইনার সনজীব কান্তি দাস।