জবি প্রতিনিধি
দ্বিতীয় দিনের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সকল ইনস্টিটিউট ও বিভাগে শিক্ষার্থীবৃন্দের সশরীরে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ছুটির দিনে পরীক্ষা নেয়া হলেও সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা।
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তবে বাস মিস করায় অনেকেরই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে বিলম্ব হয়। কিন্তু তাদের পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়নি বলে জানা যায়।
শনিবার সকাল থেকেও ক্যাম্পাস মুখরিত হয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের সেই চিরচেনা আড্ডা। সবমিলিয়ে বহুদিন পর আবার সেই চিরচেনা প্রাণবন্ত উৎসব ফিরে আসলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়।
এদিন সকাল ও বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এ সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বিভাগের পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
পরীক্ষার হল পরিদর্শনকালে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় শিক্ষকসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান বলেন, শুক্রবার ব্যতীত প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো বিভাগের কোনো একটি ব্যাচের হলেও পরীক্ষা রয়েছে। দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার জন্য ডিনরা আলাপ আলোচনা করে এভাবে রুটিন করেছে।দ্রুত পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরাও।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আজমেরি সুলতানা বলেন, আমরা অনেকটা সময় পরীক্ষার বাহিরে ছিলাম, যদিও অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। কিন্তু আমরা পরবর্তী বর্ষে উঠতে পারছিলাম না। যা আমাদের ক্যারিয়ারে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। আমরা চাই দ্রুত পরীক্ষা শেষ করে আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার এক বছর পরই করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর দীর্ঘ দেড় বছরের প্রতীক্ষা। এতটা দিন খুব মিস করেছি জবিকে। পরীক্ষার মাধ্যমে আবারও ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা রূপা বলেন, অনেকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে৷ পাশাপাশি অনেক শঙ্কায়ও আছি আমরা। শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলে এতদিনে আমার তৃতীয় বর্ষের একেবারে শেষদিকে থাকার কথা। সেখানে এখন কেবল দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি।
এছাড়াও দীর্ঘ দিনের বিরতির সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রয়েছে সেশনজটের চাপ। তাছাড়া পরীক্ষার জন্য সারাদেশ থেকে আবারও ক্যাম্পাসমুখি হয়েছে জবি শিক্ষার্থীরা। আবারও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মেস ভাড়া করে থাকা শুরু করেছেন তারা।
প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেজনজটের শঙ্কায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেজনজট কীভাবে কমিয়ে আনা যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.চঞ্চল কুমার বোস বলেন, করোনার ভিতরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিচ্ছে এটা অনেক বড়ো ব্যাপার। আমাদের পরীক্ষা শুরু মানে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা। আর সেশনজট নিয়ে আমাদের আপাতত পরিকল্পনা নেই। আগে পরীক্ষা হোক তারপর আমরা সেজনজট কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে সিন্ধান্ত নেবো।
গত ৭ অক্টোবর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে পরীক্ষা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৫৬৮ দিনের বিরতির অবসান ঘটে। প্রায় দেড় বছর পর যেন প্রাণ ফিরে পায় জবি ক্যাম্পাস।