রাজধানীর গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণির জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের আদালত আজ রোববার দুপুরে এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারক মামলাটি বিচারের জন্য বদলির নির্দেশ দিয়েছেন।এই মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে পরী মণির হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট সময়ে হাজির না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের মহানগর কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
পরে বিচারক দুপুর ২টার পর শুনানির জন্য সময় ধার্য করেন। ২টার আগে ১টা ৪০ মিনিটে একটি সাদা প্রাইভেটকারে পরী মণি আদালতে আসেন। ২টা ১০ মিনিটে তাঁর মামলার ডাক পড়লে তিনি আদালতের আসামির ডকে হাজির হন। এ সময় পরী মণির আইনজীবী তাঁর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি ও অভিযোগপত্র না গ্রহণের আবেদন করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু শুনানিতে বিরোধিতা করে বলেন, পরী মণির জামিন দেওয়া হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত। আজ পরী মণিকে নতুন করে আদালতে জামিন চাইতে হবে। এই আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
এরপরে পরী মণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত শুনানিতে বিচারকের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘মাননীয় আদালত আমি আবেদন পরিবর্তন করে দিচ্ছি।’ এ সময় তিনি আবেদন পরিবর্তন করে আবারও বিচারকের কাছে আবেদনটি শুনানির জন্য দেন। নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, ‘পরী মণি পূর্বে জামিনে ছিলেন। তিনি জামিনের কোনো অপব্যবহার করেননি।’
আইনজীবী আরও বলেন, পরী মণির হাতে অনেক ছবি রয়েছে। নতুন করে কয়েকটি ছবিতে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তাই তাঁর জামিন স্থায়ী করা আবশ্যক।’
এরপরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আগে থেকে এই মামলায় শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য ছিল। সাধারণত সকাল ১০টায় প্রত্যেক আসামির আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আসামি পরী মনির বেলা ১টা পর্যন্ত আদালতে হাজির হননি।
আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আইন সবার জন্য সমান। আদালতের কাছে কেউ অসাধারণ না। সবাই সাধারণ। প্রত্যেককে আইন মেনে চলতে হবে। আদালতে সঠিক সময়ে হাজির হতে হবে। আদালতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। পরী মণির কাছ থেকে বিদেশি মদসহ ভয়ংকর রকমের মাদক এলএসডি-আইস পাওয়া গেছে। পরী মণির জামিনের বিরোধিতা করছেন তিনি।
এরপরে পরী মণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা আদালতে বলেন, ‘স্যার, এ রকম ভুল আর হবে না।’ এরপরে বিচারক পরী মণির জামিন বহাল রাখেন এবং অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির নির্দেশ দেন।
আদালতে যেমন ছিলেন পরী মণি
আজ ২টা ১২ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় বেঞ্চ থেকে উঠে আসামির কাঠগড়ায় যান পরী মণি। শুনানি চলাকালে পরী মণি সেখানে ছটফট করছিলেন। মুখের মাস্ক সরিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। পরে তিনি ওই আদালত থেকে বের হয়ে পাশের আদালতের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা পরী মণির ছবি, ভিডিও করতে ভিড় জমান। পুলিশ ভিড় কমানোর চেষ্টা করে।
পরে পরী মণি আবার আদালতের ভেতরে চলে যান। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মামলার অপর আসামি ও সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলেন তিনি। এ সময় দীপু তাঁকে একটি ওষুধ খেতে দেন। এরপরে মাথায় পানি ঢালা হয়। তার পরে বেঞ্চে দীপুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকেন পরী মণি। এ সময় তাঁর আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত ছিলেন।
পরী মণির আইনজীবী গণমাধ্যমকে জানান, পরী মণির নিম্ন রক্তচাপ হয়েছে।
এরপরে বেঞ্চে শুয়ে পড়েন পরী মণি। কিছুক্ষণ পরে নিজে নিজে উঠে বসেন এবং দীপুকে জড়িয়ে ধরে আদালতের রুম থেকে বের হন। পরে নারী পুলিশের সহায়তার ছয় তলা থেকে নেমে সাদা প্রাইভেটকারে করে বাড়িয়ে ফিরে যান পরী মণি।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তফা কামাল অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে পরী মণি ছাড়া আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন আশরাফুল ইসলাম দীপু ও কবির চৌধুরী।
গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে।
তিন দফা রিমান্ড শেষে গত ৩১ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ পরী মণির জামিন মঞ্জুর করেন। এর পরের দিন তিনি জামিনে মুক্তি পান।