টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের মাঠ খাঁ খাঁ করছে। খেলার জন্য মাঠ আছে, অথচ মাঠে কোন খেলা নেই, গ্যালারিতে নেই ভরা দর্শক। মাঠের সৌন্দর্য হলো মাঠে থাকবে খেলা, গ্যালারিতে থাকবে দর্শক। কিন্তু এই মুহুর্তে টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের মাঠে কোন খেলা নেই, নেই দর্শক, সাধারণ গ্যালারি হোক ভিআইপি গ্যালারি হোক, মাঠে দর্শক নেই। খেলা থাকলেই দর্শক মাঠে আসবে এটাই চিরন্তন সত্য। অথচ টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে কোন খেলা নাই। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নানা অজুহাতে ফুটবল ও ক্রিকেট লীগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ খেলোয়ারদের।
খেলা নেই টাঙ্গাইল ফুটবল ফেডারেশনের (ডিএফএ) অধীনে। সর্বশেষ ২০২১ সালে ডিএফএ’র অধীনে প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ হয়েছিলো। সেবার প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে দীর্ঘদিন পর দ্বিতীয়বারের মতো ঐতিহ্যবাহী মুসলিম রেনেঁসা ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছিলো। রানার্সআপ ইয়ুথ ক্লাব। টাঙ্গাইলের ফুটবলার তৈরীর কারিগর ডিএফএ’র সচিব মরহুম আতিকুর রহমান জামিলের তত্তাবধানে সর্বশেষ ফুটবল লীগ হয়। তারপর আর কোন ডিএফএ’র অধীনে আর কোন ফুটবল খেলার আয়োজন হয়নি। এমনকি হয়নি উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন ফুটবল লীগও।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আয়োজনে সারাদেশব্যাপী কমিশনার গোল্ডকাপ হয়েছে। ওই সময় টাঙ্গাইলে দীর্ঘদিন পর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ আয়োজনের তোড়জোর চলছিলো। ঠিক তখনই টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের ঐকান্তিক ইচ্ছায় কমিশনার গোন্ডকাপের আয়োজন জমজমাট হয়েছিলো। তবে মাঠে খেলায় টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল দল দুর্বল গাজীপুর জেলার নিকট একমাত্র গোলে হেরে প্রথম খেলায় বিদায় নিয়েছিলো। ওই দিনের খেলায় গ্যালারিতে প্রচুর দর্শক হয়েছিলো। জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলামসহ টাঙ্গাইলবাসী কামনা করেছিলো টাঙ্গাইল জেলা চ্যাম্পিয়ন হবে। কারন সারাদেশের ফুটবলে, টাঙ্গাইলের ফুটবলারদের অবস্থান এখন শীর্ষে। বাংলাদেশ জাতীয় দলে এখন ৪ থেকে ৫ জন ফুটবলার নিয়মিত খেলছে। তাই স্বাভাবিক টাঙ্গাইল জেলা চ্যাম্পিয়ন হবে এটা বড় ধরনের আশা করাই যায়। কিন্তু আশায় গুড়েবালি দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল দল হেরে যায়। তারপর থেকে হেরে গেছে টাঙ্গাইলে স্টেডিয়ামও। মাঠে নেই ফুটবলের পদচারনা। মাঝে ফটবলের সর্বোচ্চ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ বা পেশাদার ফুটবল লীগে সারাদেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে চলছে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ক্লাব টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামকে তাদের হোম ভেন্যু বানাতে চেষ্টা করেছিলো। যা ক্রিকেট ও ফুটবল দ্বন্দ্বে তা সম্ভব হয়নি। পরে মোহামেডান ক্লাব ময়মনসিংহ জেলা স্টেডিয়ামকে তাদের হোম ভেন্যু বানিয়ে খেলছে।
এখন ফুটবল লীগ কবে হবে কেউ বলতে পারে না। নেই লীগ আয়োজনের কোন তৎপরতা। ফুটবলাররা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় আছে ফুটবল লীগের খেলার জন্য। ফুটবল লীগে খেলেই কিছু টাকার পাশাপাশি বড় ফুটবলার হওয়া যায়। ফুটবল লীগে তো নতুন নতুন ফুটবলার তৈরী হয়। যা ফুটবলের জন্য ভালো। টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে কোন খেলা আয়োজন না হলে মাঠের ভিতরে খেলোয়াড়দের অনুশীলনও বন্ধ থাকে। ফুটবল একাডেমীর কোচ রনজিৎ বলেন, অচিরেই নতুন কমিটির অধীনে ফুটবল লীগ হবে, ছেলে মেয়েরা ফুটবল খেলবে আমি আশায় আছি।ফুটবলের মতোই ক্রিকেটেও একই অবস্থা। টাইগার্স ক্রিকেট এসোসিয়েশনের কোচ, টাঙ্গাইল তথা ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমানে ক্রিকেট কোচ রিপন কুমার সরকার বলেন, স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা না হলে খেলোয়াড় তৈরি হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিয়মিত খেলার আয়োজন করা।
টাঙ্গাইলবাসী ক্রীড়ামোদী মানুষ। হাজারো কাজের ফাঁকে একটু বিনোদনের আশায় স্টেডিয়ামে চলে আসে। ক্রীড়াঙ্গনে সারাদেশে সাফল্যের বিচারে ক্রিকেট ছাড়া টাঙ্গাইল প্রতিটি খেলায় এগিয়ে আছে। এর মধ্যে শীর্ষে আছে ফুটবল। জাতীয় দলে টাঙ্গাইলের ছেলে বিশ^নাথ ঘোষ, সুমন রেজা, রফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, কৃষ্ণা রানী সরকার, রিতু আক্তার, মারিয়া, আলমিনা ছাড়া জাতীয় দলের পাইপ লাইনে আছে সৌরভ দেওয়ান ও মিশু শেখ ছাড়াও অনেকে। মাঠে খেলা থাকলে দর্শকের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ফুটবলার, ক্রিকেটারসহ বিভিন্ন খেলায় প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ উঠে আসবে। আর এটাই ক্রীড়াঙ্গনের চাওয়া।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার ব্যস্ততায় ফুটবল ও ক্রিকেট আয়োজন সম্ভব হয়নি। এছাড়া জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কমিটির সমস্যা থাকাতে ফুটবল লীগ আয়োজন সম্ভব হয়নি। চলতি উপজেলা নির্বাচনের পর উপজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ফুটবল মাঠে গড়াবে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী। এছাড়া কাবাডি, ভলিবল ও সাঁতার অনুশীলনের জন্য ২১ দিনের ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয়বারের মতো মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল স্মৃতি নাইট মিনি ফুটবলও অনুষ্ঠিত হবে।