সাভার উপজেলাধীন বন বিভাগ ঢাকার অধীনস্থ সাববিট কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মহিদুর রহমান জয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি মিথ্যা মামলা এবং জাল জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সাভার বিরুলিয়া ইউনিয়নে সাভার সাববিট বন-বিভাগ কর্মকর্তার কার্যালয় ছোট কালিয়াকৈর রেঞ্জ অবস্থিত। স্থানীয় উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে,বিট কর্মকর্তা মহিদুর রহমান স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু,অবৈধ দখলদার ও বহিরাগতদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে বনের জমি দখল নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এই সাব-বিট কর্মকর্তা। আর যাদের স্থাপনা মিল কারখানা,আবাসস্থল,খাল,বিল, মসজিদ,ঈদগাঁহ,কবরস্থান মাদ্রাসা রয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই মালিকানাধীন জমি রয়েছে। এ সমস্ত মিল কল-কারখানা স্থাপনার আংশিক পথ চলার রাস্তা রয়েছে,বন বিভাগের ভিতরে যে সমস্ত রাস্তাঘাট মসজিদ মাদ্রাসা ঈদগাঁহ কবরস্থান আছে সেগুলোর জনস্বার্থে ব্যবহারিত হচ্ছে,বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
আর এই সমস্ত সুযোগ পেয়ে স্থানীয় এলাকার বাসির উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে,মোটা অংকের টাকার ঘুষ ও এই সমস্ত ঘুষ বাণিজ্য মহিদুরের অধীনস্থ বন প্রহরী শহীদুল্লাহ কায়সারের মাধ্যমে হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা এবং যারা রেঞ্জ কর্মকর্তা মহিদুরের রহমানের চাহিদা মত টাকা দিতে ব্যর্থ হয়,তাদেরকে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা ও উচ্ছেদ করার ভয় ভীতি সহ ভূমিদস্যু খেতাব লাগিয়ে মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে দেন। নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন,রেঞ্জ কর্মকর্তা মহিদুর রহমানের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। ছোট কালিয়াকৈর ঈদগাঁর সামনের মসজিদের পথ চলার রাস্তা বন বিভাগের জায়গাতে পড়েছে এই মর্মে মসজিদ কমিটিকেও এই কর্মকর্তার কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। মসজিদ কমিটির সভাপতি হাজী রমজান আলী বলেন,মসজিদের জায়গা আমাদের মালিকানাধীন আমরা বিক্রমপুরের এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে কিনে রেখেছি,আমাদের কাগজ পত্র সব ঠিক আছে। কিন্তু রাস্তা নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল আংশিক পথ চলার রাস্তা বন বিভাগের জায়গার ভিতরে পড়াতে বর্তমান সাববিট কর্মকর্তা মহিদুর রহমান ও আমাদের সাথে টুকিটাকি ঝামেলা হয়েছিল পরে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে।
কিভাবে ঠিক করলেন হাজী রমজান আলীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,বন কর্মকর্তা জায়গা দাবি করলে আমরা বলি রাস্তা যদি আপনাদের জায়গায় গিয়ে থাকে তবে আপনারা মাপ ঝোঁক দিয়ে নিয়ে যান। তারপর থেকে আর সমস্যা আপাতত দেখছি না। তখন এই প্রতিবেদক মসজিদ কমিটিকে জিজ্ঞেস করেন,আপনাদের সঙ্গে মসজিদের রাস্তা নিয়ে টুকিটাকি সমস্যার ব্যাপারে বিট-কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন কিনা এবং আমরা শুনেছি আপনাদের কাছ থেকে বিট কর্মকর্তা মহিদুর রহমান পর্যায়ক্রমে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন,কথাটি সত্য কিনা? হাজী রমজান আলী প্রথমে বিষয়টা এড়িয়ে গেলেও পরবর্তীতে অস্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, এই রেঞ্জ কর্মকর্তা মহিদুর রহমান জয় এখানে আসার পর থেকে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে, এ কর্মকর্তাকে এযাবত দিতে হয়েছে, প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ। স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি মসজিদে নামাজ পড়তে এসে আক্ষেপ করে বলেন,আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, বন জঙ্গলে ভরা ছিল এখানে দিনের বেলাও কোন লোক আসতে ভয় পাইত কিন্তু কালের পরিবর্তনে এখন মাটিও স্বর্ণে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বহিরাগত লোকজনের সমাগম বেড়েছে ও তার সাথে স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী অবৈধ দখলদার,ভূমিদস্যুরা সক্রিয় একটি মহল বিট কর্মকর্তা যেই আসুক না কেন,মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তাদের যোগসাজেসে সরকারি বন বিভাগের বন জঙ্গল উজাড় করে বনের জায়গা অবৈধভাবে দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন যেন দেখার কেউ নেই। এই প্রতিবেদক প্রবীণ ব্যক্তির কাছে বর্তমান কর্মকর্তার মহিদুর রহমান জয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এই কর্মকর্তা আসার পর থেকে দালাল,ভূমিদস্যদের আনাগোনা আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো যে, এর আগের কর্মকর্তাদের চেয়ে তার চাহিদাটা অনেক বেশি,শুধু শুধু সামান্য টুকিটাকি বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষণীয় এবং বহু সাধারণ মানুষকে হয়রানি,মিথ্যা মামলাসহ ঘুষ বাণিজ্য অব্যাহত আছে।
তিনি আরো বলেন,টাকা দিলেও কারো রক্ষা হয় না,তার চাহিদাটা এতই বেশি যে অনেকে টাকা দিয়েও হয়রানি ও মামলার শিকার হতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রভাবশালী মহল,ভূমিদস্য ও অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে বন-রক্ষা,সংরক্ষণ করা খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তিনি এ সমস্ত সমস্যার কারণ হিসেবে উল্লেখিত কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়ী করছেন।
কৃষিবিদের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিট কর্মকর্তাদের কারণে বন বিভাগের জায়গা প্রভাবশালী এবং ভূমিদস্যুদের অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষকে হামলা মামলায় জড়ানো হচ্ছে,বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বর্তমান বিট কর্মকর্তা মহিদুর রহমান জয় অনেক নিরীহ ভূমিহীন মানুষকে লোভ লালসা দেখিয়ে স্থানীয় কিছু দালালদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে বসবাসের জন্য জমি বন্দোবস্ত করে দিবেন বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। বন-সংরক্ষণ কমিটিতে একাধিক ভুক্তভোগী আছেন যে, টাকা পয়সা দিয়েই তাদের প্লটের দলিল বুঝে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এদের মধ্যে সাধারণ মানুষ স্থানীয় এলাকাবাসী মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার লোক। বন- সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলিম ও মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল আহমেদ তারা বলেন, আমরাও ভুক্তভোগী বহুদিন ধরে টাকা পয়সা দিয়ে ঘুরাঘুরি করেও দলিল পাচ্ছিনা। তবে সভাপতি আব্দুল আলিম বলেন,আমি এই কর্মকর্তার কাছে কোন টাকা পয়সা দেই নাই। আমি টাকা দিয়েছি আমাদের সেক্রেটারি মুজিবর মিয়ার কাছে, এবং তা লিখিত আছে। টাকা নিয়ে মজিবর কাকে দিয়েছে বলতে পারব না।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে,বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানিকগঞ্জ যুবলীগের জেলা কমিটিতে থাকা মহিদুরের আপন ভাইয়ের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি চাকরির বয়স না থাকলেও কিভাবে পায় সরকারি চাকরি? এটাই এখন জনমনে প্রশ্ন,আমাদের অনুসন্ধান বলে,মহিদুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে (সোনার হরিণ)অর্থাৎ সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেন। সাভার বিরুলিয়া ছোট কালিয়াকৈর(বন বিভাগ) সাববিট রেঞ্জ কর্মকর্তা মহিদুর রহমান। একটি সূত্রে থেকে জানা যায়,তিনি চাকরিতে প্রবেশ করেন ১৯৯৯-২০০০ সন থেকে ২৪ সন চার থেকে পাঁচ বছর চাকরি চলমান। আমরা তার সার্ভিসের বৈধতায় সন্দিহান এবং সচেতন মহল মনে করছে, উপরোক্ত বিষয়াদি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি জোর দাবি ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের। এ সকল বিষয় নিয়ে সাভার সাবমিট বন বিভাগ কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মহিদুর রহমান জয়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি কারো কাছে টাকা পয়সা নেই নাই, কাউকে মিথ্যা আশ্বাস্য দেই নাই আর আমি কোন নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাও করি নাই, যে প্রকৃত অপরাধী শুধু তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছি। আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অভিযোগ আছে,এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,আমার বিরুদ্ধে যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে আপনি আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন আমার কোন সমস্যা নাই। আমি যদি দলিল করে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়ে থাকি আপনারা পেপার পত্রিকায় নিউজ করেন, তবে টাকা আমি নেই নাই,নিয়েছে মজিবর বন সংরক্ষণ কমিটির সেক্রেটারি। তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানান এই কর্মকর্তা।