রাজিবপুরে সরকারি রাস্তা দখল দখলদার বহাল তবিয়তে—বাজেট সংকটে প্রশাসনের নিরবতা

সরকারি জমি দখল–বাংলাদেশের এক পরিচিত চিত্র। ক্ষমতার দাপটে কিংবা প্রশাসনের গড়িমসিতে বছরের পর বছর দখল বজায় থাকে, জনগণের ন্যায্য অধিকার পদদলিত হয়। কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের একটি সরকারি রাস্তা দখলের ঘটনাও সেই পরিচিত চিত্রেরই প্রতিফলন।

একাধিকবার তদন্ত, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, এমনকি সীমানা নির্ধারণের পরও কেন দখলদাররা বহাল তবিয়তে? কেন দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? প্রশাসনের ব্যর্থতা, নাকি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দখলদারদের দুঃসাহস?

২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মোছাঃ ফাতেমা খাতুনের নেতৃত্বে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রথমবারের মতো অভিযোগ জমা দেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাটাধোয়াপাড়া গ্রামের একটি সরকারি রাস্তা স্থানীয় দুই ব্যক্তি—মোঃ আতোয়ার রহমান ও মোঃ ওয়াজেদ আলী—দখল করে রেখেছেন, যার ফলে হাজারো মানুষ চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রশাসন তখনই বিষয়টি আমলে নেয়। রাজিবপুর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও অমিত চক্রবর্তী সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেন এবং জরিপকারীদের মাধ্যমে রাস্তার সীমানা নির্ধারণের নির্দেশনা দেন। ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর সরকারি সার্ভেয়ার ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তা চারজন আমিনসহ সরেজমিনে গিয়ে রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করেন এবং লাল রঙ দিয়ে পিলার স্থাপন করেন। দখলদারদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু সে নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সীমানা নির্ধারণের পর দখলদাররা নতুন করে স্থাপনা তৈরি করেছে। সরকারি সার্ভেয়ারের দেওয়া চিহ্নিত পিলার সরিয়ে ফেলে, নতুন ঘর তুলেছে এবং রাস্তার ওপর গাছ রোপণ করেছে, যেন দখলটি স্থায়ী করা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষমতাসীন একটি মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণেই দখলদাররা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারছে।

দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর একাধিকবার প্রশাসনিক নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তৎকালীন ইউএনও অমিত চক্রবর্তী লিখিত নির্দেশে বলেছিলেন, “সরেজমিন তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, নতুবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। এরপরও প্রশাসনের কাছে একাধিকবার আবেদন জমা দেওয়া হয়, কিন্তু দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় এক বৃদ্ধ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, বারবার প্রশাসনের কাছে গেছি, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে না। প্রশাসন কি শুধু কাগজে-কলমে কাজ করবে, নাকি বাস্তবেও কিছু করবে?”

অপর এক যুবক বলেন, “যারা রাস্তা দখল করেছে, তারা ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন হয়তো তাদের চাপে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে কি প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে দখলদারদের রক্ষা করছে? নাকি এটি কেবল প্রশাসনের ব্যর্থতা?

সরকারি রাস্তা দখলের ঘটনাটি কেবল একটি জায়গা দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সাধারণ মানুষকেও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান সরকার তার আবেদনে উল্লেখ করেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় সংঘর্ষ বাঁধতে পারে, যা কাহারো কাম্য নয়।”

স্থানীয় এক দোকানদারের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে গ্রামে বড় ধরনের সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে প্রশাসন তখন কী করবে?” প্রশ্ন উঠছে—প্রশাসন কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে?

এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাঃ জাহাঙ্গীর আলম বাবু-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে ‘কুড়িগ্রাম সংবাদ’ প্রতিনিধি কে তিনি জানিয়েছেন “অনেকগুলো ঘর আছে তো, তাদের বিভিন্ন আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের কে সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যদি নিজে থেকে সরে না যায় তাহলে সেটাতো (উচ্ছেদ) অবশ্যই করা হবে। সরকারি যেকোনো একটা অভিযান করতে গেলে বাজেটেরও বিষয় থাকে। এই কারনেই মূলত দেরি করা হচ্ছে। এইরকম অভিযান পরিচালনা করতে যেরকম বাজেট দরকার সেটা এই মূহুর্তে আমাদের নেই।”

প্রশাসনের ধীরগতির পদক্ষেপ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে–সরকারি রাস্তা দখলমুক্ত করার দায়িত্ব প্রশাসনের কিন্তু যদি একাধিক তদন্তের পরও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের সামনে প্রশ্ন থেকে যায়—এতবার তদন্ত ও সীমানা নির্ধারণের পরও দখলদাররা কীভাবে তাদের অবস্থান বজায় রাখছে? কেন ইউএনও’র নির্দেশের পরও উচ্ছেদ অভিযান হয়নি? দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন কি কোনো চাপে রয়েছে? সরকারি জমি উদ্ধারে নতুন কোনো উদ্যোগ আদৌ নেওয়া হবে কি না?

সরকারি রাস্তা দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের একাধিক পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও এখনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। বারবার তদন্ত ও নির্দেশনার পরও দখলদারদের উচ্ছেদ না হওয়া প্রশাসনিক জটিলতা, আইনি প্রক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণের ফল হতে পারে। তবে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত ও কীভাবে এই সমস্যা সমাধান হয়। একটি সুষ্ঠু, কার্যকর ও ন্যায়সংগত সমাধানের মধ্য দিয়েই এই সংকটের অবসান ঘটবে—এটাই সকলের প্রত্যাশা।

আশুলিয়ায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা উত্তর এর ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

মেহেদী হাসান: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা জেলা উত্তর এর উদ্যেগে ১৮ই রমজান ১৪৪৬ হিজরী, ১৯শে মার্চ ২০২৫ইং বুধবার আশুলিয়া বাইপাইল...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x