ইটভাটা আইন সংস্কার,চলমান অভিযান বন্ধের দাবি: ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি

মাইনুল ইসলাম:

বাংলাদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,বর্তমানে মোট ৭ হাজার ৯৬ টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এই সমস্ত ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে।এসব ইটভাটার বছরে ১৩কোটি মেট্রিক টন মাটির প্রয়োজন হয়। ও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দেশের সকল ইটভাটার মালিকেরা এবং সমগ্র বাংলাদেশের বর্তমানে ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে সরকার। এমত অবস্থায় সারাদেশের ইটভাটা মালিকেরা হতাশা,আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন।

বিশেষ করে বর্তমানে চলমান অভিযান আতঙ্কে রয়েছে সারাদেশের ইটভাটা মালিকেরা দুর্বিষহ বিভিন্ন প্রকার সমস্যা ও সংকটের মধ্যে আছেন এবং বাংলাদেশের প্রতিটা জেলার ইটভাটার মালিকেরা বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় জর্জরিত। এভাবে তাদের ইটভাটা গুলো চলতে থাকলে দেউলিয়া হাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।দেশের বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকপক্ষ’র অভিযোগ,বর্তমান সরকার যে, আমাদের উপর যেভাবে স্টিম অভিযান পরিচালনা করছেন, তাতে আমাদের সারা বাংলাদেশের মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।

ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলায় গত বছরের চেয়ে এবার ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে,ঢাকা গাজীপুর কেরানীগঞ্জ মুন্সিগঞ্জ বেশ কিছু বন্ধ হওয়া ইটভাটা এ বছর পুনরায় চালু হয়েছে,তবে সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশ জেলাগুলোতে রয়েছে,বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা। তবে ইটভাটা মালিকেরা দাবি করছে, আমাদেরকে বৈধতা দেয় না কেন? আমরা যদি অবৈধ হয়ে থাকি তবে সরকার আমাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব অর্থাৎ ট্যাক্স ভ্যাট নিচ্ছেন কেন? আবার বিভিন্ন সময় সরকারের প্রশাসনের লোকেরা অভিযান পরিচালনা করছেন এবং জরিমানাও করছেন।

সারাদেশের ইটভাটার মালিকেরা ঢাকা মুন্সিগঞ্জ গাজীপুর মানিকগঞ্জ বরিশাল ভোলা বরগুনা ঝালকাঠি পাবনা জেলার আমিনপুর সুজানগর বেড়া, সাঁথিয়া, ভাঙ্গুরা ফরিদপুর ইটভাটা মালিকেরা বলেন, এবার আমাদের ইটভাটা মালিকদের মাথায় হাত আমাদের জেলাতে বেশিরভাগ ইটভাটার মালিকেরা অভিযান আতঙ্কে রয়েছে। আর বেশিরভাগ ইটভাটা গুলো চলছে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ, মানুষের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কোনরকম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। আবার অনেক মালিক ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ মালিকেরা অভিযোগ করে বলেন,ইট প্রস্তুত, ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বর্ণিত জিগজ্যাগ ইটভাটার ছাড়পত্র ও লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজতরকরণ এবং কয়লার দাম কমানো ও কয়লা সংকট যন্ত্রতন্ত্র অভিযান বন্ধে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে নিরসনের দাবি জানিয়ে আসছি,এবারও প্রতি বছরের ন্যায় আমাদের ইটভাটার বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে অভিযান বন্ধ রাখার জন্য বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমরা এবং আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি।

এ বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড.মোহাম্মদ ইউনুসের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সারাদেশের তথ্য সংগ্রহ এবং আমাদের অনুসন্ধান মতে,ঢাকা ধামরাই মুন্সিগঞ্জ কেরানীগঞ্জ গাজীপুর মানিকগঞ্জ বরিশাল পাবনা নাটোর জেলার লালপুরসহ সারাদেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার একাধিক ইটভাটা মালিক বলেন,২০২৫ ইং অর্থবছরে সারাদেশের ইট ভাটায় এভাবে অভিযান চালালে মালিকদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতিসাধন হবে বলে মন্তব্য করেন। ২০২৫ অর্থ বছরে কেউ লাভবান হতে পারবে না। কারণ কস্টিং খরচ বেড়েছে তিনগুন, আগে একজন লেবারের পিছনে খরচ হতো ৫০০ টাকা, এখন খরচ হয় ১০০০ টাকা, কয়লার দাম বৃদ্ধি মাটি সংকট,আমাদের মাটিও কিনে আনতে হয়। তবুও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না এবং মাটির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ মাটি সরকার কাটতে দিচ্ছেন না, রাতের অন্ধকারে মাটি কাটতে ও আনতে হয়। বাংলাদেশের সব জেলাতেই ইটভাটার মাটির সংকট চরমে। আর মাটি ছাড়া ইট প্রস্তুত করা সম্ভব না।

মালিকেরা আরো বলেন,সরকার আমাদের মাটি ও কাটতে দিবে না এবং ছাড়পত্র ও দিচ্ছেন না।ভাটা চালাতে গেলে পরিপূর্ণ কাগজপত্র লাগে সে ক্ষেত্রে আমাদের বৈধ ঝিকঝাক ইট ভাটা যেগুলো আছে সেগুলোর ছাড়পত্র ও দিচ্ছেন না আবার সরকারি লোকজন এসে অভিযান চালিয়ে অর্থ দণ্ড করছেন। কয়েকজন ইটভাটা মালিক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পাবনা নাটোর বগুড়া আশপাশের জেলাগুলোতে বেশিরভাগ ইটভাটায় খড়ি দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে, খড়ি দিয়ে পোড়ানো তো সরকারিভাবে অবৈধ, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে করিনা, সর্ব প্রথম কয়লার দাম ছিল প্রতি টন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে আর বর্তমানে তার দাম বেড়েছে তিনগুণ,লেবার কস্টিং বেড়েছে তিনগুণ বর্তমানে সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। মোট কথা বর্তমান একটা ইট ভাটায় ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হয়। সে তুলনায় আমাদের ইটের দাম অনেক কম। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে আমাদের যে কস্টিং হয় তাতে করে তুলনামূলক ভাবে ইট বিক্রি করতে পারিনা বরং আমাদের লোকসান হয়। এছাড়া সরকারি ঋণ ছাড়া এগুলো সম্ভব না আর আমরা এই ব্যবসা ছাড়তেও পারছি না এবং টিকে থাকতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ইট ভাটায় ইনভেস্ট করতে হয়।

তাছাড়া নানা প্রকার সমস্যার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়, যেমন লেবারদের লক্ষ লক্ষ টাকা দাদন দিয়ে আনতে হয়, আবার লেবাররা কয়েকদিন কাজ করার পরে গ্রুপ সহ রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।আমাদের ভাই নানান সমস্যা ফেস করে এভাবেই ভাটা চালাতে হয়। আর এ বছর ইটের দাম কম,বেচাকেনা মোটেই নাই। লেবারদের খোরাকি দিতে পারি না। অনেক ভাটায় সিজন শেষ হওয়ার আগেই মাটির অভাবে ইট বানানো ও পোড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ারও রয়ে গিয়েছে ও বৃষ্টি আসলে তো লক্ষ লক্ষ ইট নষ্ট হয়ে যায়। যে সমস্ত মালিকেরা মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইটভাটায় কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছেন তারা এবার এত বড় লোকসান কাটিয়ে উঠতে না পারলে তাদের দেউলিয়া হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। তারা আরোও বলেন, আমাদের প্রতিটি ইট ভাটায় ২০০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন এবং এদের সাথে পরিবারবর্গ রয়েছেন।

মোট কথা হাজারো লোকের এই ইটভাটা থেকে তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। সরকার যদি এই ইট ভাটা গুলো বন্ধ করে দেয় শ্রমিক গুলো এবং মালিকেরা পথে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায়ান্তর থাকবে না। তাই আমাদের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট মালিক ও শ্রমিকরা একটাই দাবি আমাদের ইটভাটাগুলোতে বর্তমান অভিযান পরিচালনা বন্ধ রাখতে জোর দাবি করছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-ইটভাটার মালিক ও সমিতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। উক্ত সভায় বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে জিগজ্যাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও আইনের ৮ (৩) (ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপধারায় দূরত্ব নির্দিষ্ট করার কারণে দেশের অধিকাংশ জিগজ্যাগ ইটভাটার মালিকরা ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না।

২০০২ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র এবং ২০১০ সালে পুনঃরায় অধিকতর পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ ভাটা স্থাপনের নির্দেশে আমরা ভাটাগুলো স্থাপন করি। তারপরও আমাদের নানাভাবে হয়রানি হতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি’র মালিকরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ও ধারদেনা করে প্রতিটি ইটভাটায় বর্তমানে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাটায় দুই থেকে তিনশ শ্রমিক কাজ করে। এখন এসব ভাটা বন্ধ করে দিলে মালিকদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। এছাড়া কয়লার সংকট ও দাম কমানোর এবং সকল প্রকার সমস্যা সমাধানসহ,বর্তমান অভিযান পরিচালনা বন্ধ রাখারও জোর দাবি জানান, ইটভাটায় দিনমজুর খেটে খাওয়া শ্রমিক ও ভুক্তভোগী মালিকেরা।

আশুলিয়ায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা উত্তর এর ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

মেহেদী হাসান: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা জেলা উত্তর এর উদ্যেগে ১৮ই রমজান ১৪৪৬ হিজরী, ১৯শে মার্চ ২০২৫ইং বুধবার আশুলিয়া বাইপাইল...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x