ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ‘গভর্নরের স্মৃতিকথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ‘গভর্নরের স্মৃতিকথা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিএ ভবনের আইসিএবি মিলনায়তনে বণিক বার্তা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে আমি শুধু গভর্নরের সময়কাল নয়, আমার জীবনের নানা স্মৃতি নিয়েই কথা বলেছি। ২০১৯ সালে বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিল। এবার তাতে আরো কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। তিনি বর্তমান দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা নিইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিল তা যারা এর ভেতরে গিয়েছি, তারা ছাড়া বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না। আমরা খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলছি।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাঙালিরা বিদেশীদের কাছে নিজেরা নিজেদের সমালোচনা করি। কেউ ওপরে উঠতে চাইলে তাকে টেনে নামানোর প্রবণতা আছে আমাদের। বিদেশীদের কাছে নিজেদের কথা বলবেন, কিন্তু একটু রয়েসয়ে বলবেন। নিজেদের প্রতি সম্মানটুকু রাখবেন। সবাইকে নিয়ে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি, সেখানে সহযোগিতা করবেন। এটিই আশা করি। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘বইটির প্রথম সংস্করণ আমরা ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছি। এ বছর তারই বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক কিছুই আমাদের অজানা আছে। বাংলাদেশকে বোঝার জন্য, যারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন, পাবলিক সার্ভিসে কাজ করেছেন; তাদের কাছ থেকে তাদের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ বইটি সে বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, ‘রাজনীতি সম্পর্কে জানা না থাকলে গভর্নর হওয়া যায় না। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দেশের রাজনীতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা ছিল, যা গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনে কাজে লেগেছে। পৃথিবীর যেসব গভর্নররা বই প্রকাশ করেছেন, তারা আসলে রাজনৈতিক বিষয়গুলো কীভাবে সামাল দিয়েছেন; সে বিষয়ে আলাপ করেছেন। প্রত্যেক গভর্নরের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের সম্মুখে তাদের অবস্থান দাঁড় করানো। আমাদের দেশে একজন গভর্নর কীভাবে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেন, সেখানে একটা বড় ফাটল রয়েছে। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। আশা করি তিনি কীভাবে ফিসক্যাল ও মনিটরিং বিভাগের হারমোনাইজেশন ঘটানো যায় এবং কীভাবে খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে দাঁড় করানো যায়, সে বিষয়ে উদাহরণ তৈরি করে যাবেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বইটির উল্লেখযোগ্য দুটি দিক হলো এতে উঠে এসেছে তিনি কোথা থেকে কোথায় কোথায় এসেছেন। তিনি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এ উঠে আসার গল্পের মধ্যে কোনো সংকোচ নেই। আরেকটি দিক হলো তিনি কর্মজীবনে অবশ্যই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন, কিন্তু বইটিতে যাদের কথা উল্লেখ করেছেন সবার ভালো দিকটিই তুলে ধরেছেন। এছাড়া আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তিনি বইটিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের কথা বলেছেন এবং বইটি উৎসর্গ করেছেন খেটে খাওয়া মানুষদের।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের গ্রাম দেখা কতটা জরুরি; তার লেখায় তা উঠে এসেছে। তিনি তার কর্মজীবনে উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়েছেন, যা তাকে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের বোঝার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। আমি মনে করি সরকারি চাকরিতে প্রান্তিক পর্যায়ে পরিদর্শনের বিষয়টি আবার চালু করা উচিত।’

অর্থনীতিবিদ ড. মাহাবুব উল্লাহ বলেন, ‘ড. সালেহউদ্দিনের রাজনীতি ও লেখাপড়ার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ ছিল। বইটিতে তিনি তার জীবনের যে বর্ণনা তুলে ধরেছেন, সেখান থেকে আমরা একটা শিক্ষাই পাই। সেটি হলো যেকোনো পর্যায়ে থেকে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে শিক্ষা। আমরা যদি শিক্ষাকে সর্বজনমুখী করতে পারি তাহলে দেখা যাবে সমাজের বৈষম্য অনেকাংশে কমে এসেছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মারুফুল ইসলাম, সাবেক ব্যাংকার ও লেখক ফারুক মঈনউদ্দিন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রেসিডেন্ট মারিয়া হাওলাদার, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী, হাসান খালেদ ফয়সাল ও ড. জিয়াউল আবেদীন, আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মঈনউদ্দীন মোনেম প্রমুখ।

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’: নাহিদ ইসলাম

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় নাগরিক...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x