মাইনুল ইসলামঃ
সারাদেশের ইটভাটা মালিকদের হয়রানি করা বন্ধ না করলে আগামী ঈদুল ফিতরের পরে আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশ অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার ২৭ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান বলেন,বর্তমানে ইট শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখের অধিক শ্রমিক কর্মচারী জড়িত। বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে বিভিন্ন ইটভাটায় হানা দিয়ে জেল ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এসব হয়রানি বন্ধ না হলে রোজা ঈদের পরে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে সারা বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে। লিখিত বক্তৃতায় ফিরোজ হায়দার বলেন,বাংলাদেশের ইটভাটা মালিকেরা বিগত ৩৫-৪০ বছর যাবৎ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ সব অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখছে। দেশের উন্নয়নের সাথে সমতা রেখে ভাটার মালিকেরা বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তির জিগজাগ ভাটা স্থাপন করি। যা জ্বালানি সাশ্রয়ী,পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও উপমহাদেশে টেকসই এবং সহজ প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে জরিপ অনুযায়ী,বর্তমানে দেশের ইটভাটাগুলো মাত্র ৫-১০ শতাংশ বায়ুদূষণ করছে,জৈববস্তু পোড়ানোতে ৪০ শতাংশ এবং যানবাহনের কালো ধোয়া ৫০ শতাংশ দূষণ করে।
পূর্বে ইটভাটার দূষণমাত্রা ছিল ৫৮ শতাংশ। বিদ্যমান জিগজাগ ভাটায় আরও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন। এই শিল্পে প্রায় ৫০ লাখের অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে এবং ৫০ লাখ পরিবার তথা ২ কোটি মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা আমরাই করেছি। দেশের ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এই লোকগুলো বেকার হয়ে পড়বে।
এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইটভাটার বিপরীতে ১ কোটি টাকার উপরে ব্যাংক লোন রয়েছে,যা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এই সমস্ত ইট ভাটাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সব ব্যাংক লোন অনাদায়ী থেকে যাবেন। ইটভাটার মালিকেরা বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব দিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন,উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অত্যন্ত আন্তরিক হলেও বর্তমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জিগজাগ ইটভাটার সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার মাধ্যমেই ইটভাটা পরিচালনার একটি যৌক্তিক সমাধান হবে। সবার আগে ড্রাম চিমনি, ফিক্সড চিমনি ও লাকড়ি দিয়ে পোড়ানো ইটভাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করার সিদ্ধান্তে উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা না করে তার বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে বৈধ পদ্ধতির জিগজাগ ইটভাটায় জরিমানা ও ভাঙচুর করছেন। আমরা কোনো অবস্থাতেই এই অন্তবর্তী কালীন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দিতে চাই না। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্টরা ইট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের মখোমুখি আমাদেরকে দাঁড় করানোর চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জিগজাগ ইটভাটা বন্ধের প্রতিবাদ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন (সংশোধন) আইন ২০১৯ এ বর্ণিত জিগজাগ ইটভাটার ছাড়পত্র ও লাইসেন্স প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনের জন্য বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি।
এই ৬ দফাগুলো হলো- ১নং ২০১৩ সনের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও ওই আইনের ৮(৩) (৪) এবং ৮ (৩) (খ) উপধারায় ‘দূরত্ব নির্দিষ্টকরণের’ কারণে দেশের কিছু জিগজাগ ইটভাটার মালিকেরা ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলন এবং ট্যানেল কিলনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারণ করেছে। সুতরাং আমাদের জিগজাগ ভাটার জন্য ওই আইনের ৮ (৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দূরত্ব ৭০০ মিটার করে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারির মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদানের আবেদন ও দাবি জানাচ্ছি।
২নং জিগজাগ ইটভাটায় কোনো প্রকার হয়রানি বা মোবাইল কোর্ট করা যাবে না। ৩ নং কোনো ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে বন্ধ করতে হবে।৪ নং পরিবেশগত ছাড়পত্র,ডিসি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি ইস্যু/নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেওয়ার বিধান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করছি। ৫ নং ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি করছি। ৬ নং ইটভাটা পরিচালনায় দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান আগামী কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং তিনি বলেন,এ সমস্ত দাবি আদায়ের আগামী ৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১১ মার্চ প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ঈদের পরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার মধ্যদিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংগঠনের মহাসচিব মোনায়েম হোসেন রাজা, সিনিয়র সহ-সভাপতি সদরুল ইসলাম,সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, যুগ্ম মহাসচিব নুরুজ্জামান সহ জেলা উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।