আল-শাহরিয়ার বাবুল খানঃ
১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনা হত্যা ষড়যন্ত্র মামলাসহ ২৭ মামলার আসামী হন বি এম বাকির হোসেন।সে সময় তিনি দুই বছর জেল খাটেন। আওয়ামী সরকার কর্তৃক ব্যাংক, বীমা দখল ও শ্রমিক রাজনীতি দমন এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ দখল করার উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করে।১/১১ সরকার ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বি এম বাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি দুদকে সম্পদের হিসাব জমা দেন। তথ্য গেপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের মে মাসে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ আদালত (কেঙ্গারু আদালত নামে খ্যাত) তাকে ১৩ বছরেরর কারাদ- দেন। একই মামলায় তার স্ত্রী নাজমা হোসেনেরও ৩ বছরের সাজা হয়।দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর ও নানামুখী নির্যাতনের কারণে বি এম বাকির হোসেন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসসহ নানা রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে এবং উচ্চ আদালতে গুরুত্বর অসুস্থ বি এম বাকির হোসেনের চিকিৎসার জন্য বারবার জামিন চেয়ে আবেদন-নিবেদন করার পরও অ্যাটর্নি জেনারেল ও তার দপ্তরের আইনজীবীদের বিরোধিতার কারণে তার জামিন হয়নি। অথচ একই গ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগ নেতা পংকজ দেবনাথসহ তিন-চারজন মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর জামিন হয়। বাকির হোসেনের মামলার আইজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার মওদুুদ আহমেদ।তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের আফিল বিভাগ জামিনযোগ্য সকল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জামিন না-মঞ্জুর করে। পরিশেষে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে জেলখানায় সকাল ১১টায় বাকির হোসেন অসুস্থ হলে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে নিয়ে ইনজেকশন দেওয়ার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সেখানে ৫ ঘন্টা অজ্ঞান থাকার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পিজি হাসপাতাল, বার্ডেমে চিকিৎসা দিতে অপারগতার কারণে রাত ২টায় লালমাটিয়ার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নেওয়া হয়।সেখানে অবস্থার অবনতি হলে অ্যাপোলো হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ভর্তি করা হয়।
২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি বি এম বাকির হোসেন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, তৎকালীন কারা ডিআইজি প্রিজন সূত্রে জানা যায়, জেলখানায় বাকির হোসেন গুরুত্বর অসুস্থের পূর্বে একটি ট্যাবলেটও তাকে সেবন করতে হয়নি। তাকে স্লো পয়োজনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা বি এম বাকির হোসেনের মৃত্যুর পর ১১ জানুয়ারি ২০১০ সুপ্রিম কোর্টে মৃত বি এম বাকিরের আপিল বিভাগে মামলা শুনানীকালে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন : ‘আপনাদের জামিনের দরকার নেই, আল্লাহ তাকে জামিন দিয়েছেন।’
২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি বি এম বাকির হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুর তদন্ত দাবি করে বিএপির তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, তারা বি এম বাকির হোসেনের এ রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুতে শুধু বেদনাসিক্তই নন, শঙ্কিত ও বিচলিতও বটে। তিনি আরো বলেন, আকস্মিকভাবে বি এম বাকির হোসেনের জ্ঞান হারানো পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় ¯œায়ুতন্ত্রের যে পরিবর্তন ধরা পড়ে, তা এমন উদ্বেগজনক- যা একজন সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক মানুষের হতে পারে না। এ পরিবর্তন তার কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্তের উপর আঘাত বা অন্য কোনোভাবে হয়ে থাকতে পারে। যা সুচিকিৎসার বঞ্চনাই নয়, বরং গভীর ষড়যন্ত্র বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যার পরিণতিতে বি এম বাকির হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। সে সময় সংসদে দাঁড়িয়ে বি এম বাকির হোসেনের ছবি হাতে নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ওরা আমার বাকিরকে মেরে ফেলেছে। বাকিরের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। তিনি কারা অন্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।শ্রমিক নেতা বি,এম বাকির হোসেন এর জেলের জীবন কাহিনী ও মৃত্যু













