টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা, কাকুয়া, বাঘিল ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের যমুনা তীরজুড়ে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বালি–মাফিয়া ও চাঁদাবাজ চক্র। দিনের বেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চোখে পড়লেও রাত নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টে যাচ্ছে পুরো জনপদের চিত্র। যমুনার বুক চিরে চলতে থাকা অবৈধ ড্রেজারের শব্দ, চরাঞ্চলের মানুষের মনে তৈরি করছে নতুন ভয়ের আবহ।
অস্তিমিত্র চক্রের পুনরুত্থান:২০২৩ সালে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সর্বহারা চক্রের কর্মকাণ্ড থেমে যাওয়ার আশা করেছিল স্থানীয় মানুষ। তবে দুই বছরের ব্যবধানে সেই চক্রেরই কয়েকজন পুরোনো সদস্যকে ফের রাতের আঁধারে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি—বালু লুট, চাঁদাবাজি ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এখন ‘রুটিন অপারেশন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চরের জীবন বিপন্ন:যমুনার তীব্র স্রোত ও বেপরোয়া ড্রেজিং মিলিয়ে কয়েকটি চর এখন মারাত্মক ভাঙনের ঝুঁকিতে। রাতের ভিতরেই ঘরবাড়ি, বাঁশঝাড়, ফসলি জমি নদীতে মিশে যাচ্ছে। জেলে, মাঝি থেকে শুরু করে নারী–শিশু—সবারই নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।
স্থানীয়দের শঙ্কা—এভাবে বালু তোলা চলতে থাকলে যমুনা বহুমুখী সেতুসহ আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও হুমকিতে পড়বে।
নদীপথে হামলার অভিযোগ:৩ ডিসেম্বর রাতে ট্রলার নিয়ে যমুনা পাড়ি দিচ্ছিলেন মাঝি ফারুক হোসেন। নদীর মাঝখানে একটি ড্রেজারের শব্দ শুনে তিনি কাছে যেতেই দুর্বৃত্তরা তাকে আটক করে মারধর এবং টাকা দাবি করে—এমন অভিযোগ তুলেছেন তিনি। টহলরত নৌ–পুলিশ পরে তাকে উদ্ধার করলেও এ ঘটনায় তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। নৌ–পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে“ফারুককে সন্দেহজনক অবস্থায় আটক করা হয়েছিল, অপহরণ নয়।”এ ব্যাখ্যা স্থানীয়দের আরও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে—সন্দেহের দায়ে কোনো বেসরকারি চক্র কি সাধারণ মানুষকে তুলে নিতে পারে?
প্রশাসনের বক্তব্য—চক্র ভাঙতে জোর অভিযান
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ইউএনও জানান, উপজেলায় কোনো বৈধ বালুমহাল নেই এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থলে নিয়মিত টিম পাঠানো হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে চরবাসীর অভিমত ভিন্ন—অভিযান শেষ হলেই কিছুদিন চক্র নিস্তব্ধ থাকে, পরে আবার নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনছে ড্রেজিং অবৈধ বালু উত্তোলনের সরাসরি প্রভাব হিসেবে—নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে,কৃষিজমি দ্রুত বিলীন হচ্ছে। নৌ–চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে, জনবসতি ও সরকারি স্থাপনা হুমকির মুখে নদীপারের বাসিন্দারা জরুরি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
উপসংহার:যমুনা তীরের মানুষের প্রতিটি রাত এখন আশঙ্কা আর আতঙ্কের। বালু–মাফিয়া, চাঁদাবাজি চক্র ও দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা—সমন্বিত উদ্যোগ, নিয়মিত নজরদারি এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত এই জনপদের শান্তি ফিরিয়ে আনা হবে।













