মিজানুর রহমান, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ):
বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে কালিগঙ্গা নদীর তীব্র স্রোতে সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চালের জনপদ ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন চরম বিপাকে। নদী গর্ভে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই এখন বাসস্থান ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজতে ছোটাছুটি করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ -পূর্বাঞ্চলের বিশেষ করে চান্দহর ইউনিয়নের বার্তা গ্রাম, জামশা ইউনিয়নের বালুরচর, চারিগ্রাম ইউনিয়নের বড়াটিয়া বাজার এবং দক্ষিণ চারিগ্রামবাসি অনেকাংশে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। দক্ষিণ চারিগ্রামের বাসিন্দা মুজিব সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোজাফফর হোসেন বলেন, ২-৩ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বার্তা গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসি শফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের এলাকার পাকা সড়কটি কালিগঙ্গার উত্তাল স্রোতে বারবার ভাঙনের কবলে পতিত হচ্ছে। ৩-৪ বছর আগে পনি উন্নয়ন বোর্ড এখানে ভাঙনরোধে বালুভর্তি বস্তা ফেললেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং ক্ষণস্থায়ায়ী। এবারো ভয়াল স্রোতে নদী পাড়ের প্রায় ১৫-২০ টি ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ঐ এলাকার মনসুর আলী, ওহাব আলী, আব্দুল করিম, আক্কেল আলীসহ ভাঙ্গন কবলিত বহু পরিবার জানান, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হওয়াতে নতুর করে বাঁচার তাগিদে সড়ে এসে বাড়িঘর পুন:নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে আবার কেউ কেউ ভাঙ্গনের কবলে নি:স্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় দুইটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ ভাঙ্গনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাঘুলি-শান্তিপুর এলাকার মান্নানের দোকান হতে চান্দহর ইউনিয়ের বার্তা গ্রাম সংযোগ সড়কটি রয়েছে বেশ ঝুঁকিতে। পাশের ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের সাথে যোগাগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ সড়কটি। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন। বন্যার পানি ক্রমশ বাড়াতে রাস্তাটি খুব ঝঁুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ চারিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুরাজ বলেন, এ এলাকার বড়াটিয়া বাজার এলাকাটি ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘরবাড়ি তীব্র স্রোতের কবলে পড়ে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনরোধে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খোঁজে বের করার আহবান জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। দক্ষিণ জামশা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রুহুর আমিন বলেন, এ এলাকার বালুরচর গ্রামে নদীর তীব্র স্রোতে কয়েকটি ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানের মত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ এলাকার নদ-নদীর পানি। ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিংগাইরের বেশিরভাগ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে সিংগাইরে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অফিস কার্যালয়। তাছাড়া লোকালয়ে পানি বন্দি হবার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে গৃহপালিত পশুর খাবার সংকট। এক দিকে মহামারি করোনা আর অন্যদিকে বন্যা দুইয়ে মিলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য দেখা দিয়েছে “মরার উপর খাড়ার ঘা”। সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে সরকারি ভাবে কৃষকদের জন্য প্রনোদনার ব্যবস্থা করা হলে তা কৃষকদেও নিকট পৌঁছে দেয়া হবে। সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মুশফিকুর রহমান খাঁন হান্নান এবং সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনরোধে ও বন্যা কবলিত এলাকার পানি বন্দি অসহায়দের সাহায্য করার তাগিদে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।