
যে রাঁধে সে কি সব সময় চুল বাঁধার সুযোগ পায়? এই প্রশ্নটাই একযুগ আগেও ঘুরত বিভাগীয় শহর বরিশালের ঘরে ঘরে। রমজান মাসেও সারা দিন ঘরের কাজেই ব্যস্ত থাকেন এখানকার বেশির ভাগ নারী। তার মধ্যে যেটুকু ফুরসত মিলত, তাতে বন্ধ ঘরে, বড়জোর বাড়ির ছাদে পড়ে নিতেন নামাজ। ঈদে নামাজ পড়ার জায়গা বলতে এতদিন এই চৌহদ্দিতেই অভ্যস্ত ছিলেন শাহীনা আজমীন, রেবেকা সুলতানা, রিজিয়া বেগম, ফরিদা বেগম, আলেয়া বেগমরা। কারণ, মসজিদে যাওয়া নিয়ে ছিল নানা বিধি-নিষেধ। চেষ্টা যে করেননি, তা নয়। কিন্তু সেই লড়াইয়ের পথ ছিল কঠিন। এক যুগ আগের এই জনপদে এখন যেন উল্টো পুরাণ।
প্রায় একযুগ আগে কেন্দ্রীয় জামে কসাই মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দিনভর রোজা রাখার পরে মসজিদেই তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন নারীরা। শুক্রবার জুমা, তারপর ফজর বাদে চার ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পুরুষের পাশাপাশি আদায় করতে পারবেন। ফলে পুরনো ছবিটা বদলাল।
সেই থেকে বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে হেমায়েত উদ্দিন রোডের জামে কসাই মসজিদে গিয়ে দল বেঁধে নামাজ শুরু করেন নারীরা।
ঈদের নামাজ পড়তে আসা গৃহবধু রিজিয়া বেগম বলছিলেন, ‘নারীদের যে বেড়াজালে আটকে দেওয়া হয়েছিল, তার বাইরে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে নামাজ পড়তে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ মসজিদে নামাজ পড়তে পেরে খুশি লায়লা বেগম, আলেয়া বেগমরাও। রেবেকা সুলতানা কথায়, ‘আমরা চাই জামে কসাই মসজিদের মতো সর্বত্রই মসজিদে মেয়েদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা হোক’।
বিভাগীয় শহর বরিশালে একযুগ আগের এমন সিদ্ধান্তে খুশি স্থানীয় নারীরা। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কতটা লড়াই আছে, সেটা ধরা পড়ে শাহীনা আজমীনের কথায়। তিনি জানালেন, ‘প্রথমে আশপাশের নারীদের এনিয়ে সচেতন করা হয়, তার পর যুদ্ধটা শুরু হয় বাড়ির ভেতর থেকে। বাড়ির ছেলেদের বিষয়টি বোঝানো হয়। পরে সেই ছেলেরাই বাড়ির মেয়েদের দাবির কথা মসজিদ কমিটির কাছে জানান।
এর মধ্যে বছর ছয়েক আগ থেকেই মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে বাড়ির মেয়েদের মধ্যে। তাতে বাধাও এসেছিল। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে বাড়ির ছেলেরা পাশে থাকায় লড়াইটা চালানো সহজ হয়ে পড়ে’।
শাহীনা আজমীন আরো জানান, শুরুর দিকে নারীরা মসজিদে আসতেন বছরে একবার, শুধু ঈদের নামাজ পড়তে। এর পর শুক্রবার জুমার নামাজ, পরবর্তিীতে তারা চার ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় শুরু করেন। তবে এখনো ফজরের সময় নারীরা মসজিদে আসেন না।
ফরিদা বেগম বলেন, প্রথম বছর অনেকে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন রোজই বাড়ছে নামাজ পড়তে আসা নারীদের সংখ্যা। শুরুর দিকে ১৫ জনের পর এখন সংখ্যাটা ১০০ ছাড়িয়েছে।
ফরিদাই বললেন, আরবের অনেক মুসলিম দেশে পুরুষদের সঙ্গে নারীরা নামাজ পড়েন। দেরিতে হলেও বরিশালে সেটা শুরু হয়েছে। নারীদের মধ্যে চেতনতা বাড়ছে।
মসজিদে গিয়ে নারীরা নামাজ পড়তে পারবেন কিনা, তাই নিয়ে এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিতর্ক চলে। তবে জামে কসাই মসজিদের ইমাম মাওলানা কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘শরিয়ত অনুযায়ী, নারীরা চাইলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেই পারেন। তবে সেখানে তাঁদের নামাজ পড়ার আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। যা আমাদের এখানে করা হয়েছে’।