
মিজানুর রহমান :
সিংগাইরে শ্বশুর বাড়িতে প্রবাসির স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জনমনে বেড়েছে কৌতুহল ও উত্তেজনা । পরকিয়া প্রেমের নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে হরদম এমনটা দাবি নিহত পরিবারের ।
গত ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের বেগুনটিওরী গ্রামের শ্বশুর আ: ছালামের বাড়ি হতে মৌ আক্তার (১৯) নামে তার পুত্রবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ । নিহত মৌ একই উপজেলার জায়গীর গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে । প্রায় ৮ মাস হয় মালয়েশিয়া প্রবাসি আলামিন (৩০) এর সাথে তার বিয়ে হয় । বিয়ের কয়েক মাস পরেই মৌকে তার স্বামী মালয়েশিয়া নিয়ে যাবে এমন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে শ্বশুর ছালাম (৬০) ও শাশুড়ি খাদিজা বেগম (৫০) । এরই জেরে চলছিল পারিবারিক কলহ এমনটা জানান নিহতের পরিবার ।
নিহত পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার রহস্য বের করতে একাধিকবার সরেজমিনে অনুসন্ধানে খুলে যায় অনেকটা রহস্যের জটলা । আ: ছালাম ও স্ত্রী খ্দিজার বিরুদ্ধে একচেটিয়া বলতে থাকেন প্রতিবেশীরা । এলাকাবাসি জানান, তারা দুজনে অনেকটা হার্মাদ-হিংস্র ও পরলোভী প্রকৃতি স্বভাবের লোক । সব সময় এলাকার কারও না কারও সাথে তাদের বিরোধ লেগেই থাকে । মিথ্যা মামলা ও হামলা করে এলাকায় বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রভাব বিস্তারে ।
প্রতিবেশি জাকির মোল্লা, মহিদুর, ফজিরন ও মমতাজ বলেন, ঘটনার দিন সকালে ছালামের বাড়িতে বহু মানুষের আনাগোনা দেখে তার বাড়ি যাই । এ সময় নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গা বিশেষ করে কান, কোমর ও বুকে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় । অন্যদিকে গত ৩ মে রোববার দুপুরে ছালামের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল দেখে ভেতর থেকে বাড়ির মেইন টিনের ফটক বন্ধ করে দেন খাদিজা । গেইট খুলতে বললেও ভেতর থেকে মেলেনি কোন সাড়া শব্দ । পরে মুঠোফোনে কল করলে খাদিজা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন । টাকার বিনিময়ে আপনারা সব ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন কিছু না বলে ফোন রেখে দেন ।
অন্যদিকে মজিরন নামের একটি বয়স্ক মহিলা বলেন, ছালামের বড় মেয়ের জামাই পাশের গ্রাম জয়মন্টপের তোফাজ্জল হোসেন তোপা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য জয়মন্টপে আপোষ মিমাংসার লক্ষ্যে মাদবর প্রধানদের নিয়ে শালিসের আয়োজন করেন ।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তোফাজ্জল হোসেন তোপা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, মজিরন নামের মহিলার সাথে আমার শ্বশুরের বিরোধ আছে তাই ওসব বলছে । পরে তিনি এ প্রতিবেদককে সাক্ষাত করতে বলেন । নিহতের বাবা মকবুল ও মা বন্যা বলেন, গত ১৩ এপ্রিল ছালাম আমাদের বাড়ি হতে মেয়েকে নিয়ে যায় অশালীন ব্যবহার করে । পরে এখান হতে জয়মন্টপের দেউলি ব্রীজ পর্যন্ত রিক্সাযোগে গেলেও বাকি দীর্ঘপথ মেয়েকে নিয়ে যায় পায়ে হেঁটে ।
এ খবর প্রবাসি জামাতা শুনে তার মা-বাবার সাথে খারাব ব্যবহার করে কথাকাটাকটি করে । এর পর হতেই চলছিল আমার মেয়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন । তারা চাইতো না যে আমাদের মেয়ে মালয়েশিয়া তার স্বামীর কাছে যাক । তারা আরো বলেন, নিহত হবার পরের দিন শুক্রবার জামাতার কথামত মৌকে আমাদের বাড়িতেই আসার নির্ধারিত দিন ছিল । যতদিন মালয়েশিয়া না যাবে ততোদিন এখানেই রবে । নিহতের চাচা সুরুজ সরকার বলেন, আমার ভাতিজি যে কিনা বাঁশের সাথে ছাগলের রশি বাঁধতে পারেনা আর সে করবে আত্মহত্যা ? আমরা বিশ্বাস করিনা । এদিকে স্থানীয় সচেতনরা মনে করছেন হাসপাতালের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বের হলেই জানা যাবে প্রকৃত রহস্য ।
সিংগাইর থানার এসআই মনোহর আলী ওরফে মনোয়ার বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ পাঠানো হয়েছে । এ রিপোর্ট বের হলেই বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনার রহস্য