মনবাগানে শান্তির ঘ্রাণ

দুনিয়াজুড়ে অশান্তির দাবানল জ্বলছে। শান্তির খোঁজে হয়রান সবাই। সব আছে, শুধু শান্তিটুকু নেই। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতা মানব জীবনে সুখ এনে দিলেও মনবাগানে শান্তির ঘ্রাণ ছড়াতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এর অবশ্য কারণও আছে। বিজ্ঞানের কাজই দেহ নিয়ে। আত্মা বা মন নিয়ে বিজ্ঞান এখনো লাখ বছর পিছিয়ে আছে। তাই আধুনিক বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার আমরা পেয়েছি সবই দেহসুখের মাত্রা বাড়িয়েছে, মনোজগতে শান্তি ও তৃপ্তি দিতে পারেনি একবিন্দুও।

সেদিন কথা প্রসঙ্গে এক সুহৃদ বললেন, আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে আমরা খুব বড়াই করি। বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে, বিজ্ঞান জয় করে ফেলেছে। কিন্তু বিজ্ঞান কতটুকু এগিয়েছে? বিজ্ঞান চাঁদে গেছে, তাতে মানুষের কী লাভ হয়েছে। বিজ্ঞান এসি আবিষ্কার করেছে, অথচ এসি যখন ছিল না তখন মানুষ আরও ভালোই ছিল। এখন দ্রুতগতির যানবাহন আবিষ্কার হয়েছে, এতে কী হয়েছে? উল্টো প্রচুর পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। যখন যানবাহন ছিল না তখনো মানুষ যোগাযোগের কাজ চালিয়েছে। মোটা দাগে বিজ্ঞান এমন কোনো আবিষ্কার করতে পারেনি যা মানবসভ্যতায় আধ্যাত্মিক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

ওই ভাই আরও বলেন, আগে আমরা কলমে লিখতাম, এখন টাইপ করছি। আগে আমরা সরাসরি দেখতাম, এখন ছবি, ভিডিও দেখি। অস্বীকারের উপায় নেই এসব আবিষ্কার আমাদের চোখের সুখ, দেহসুখ বাড়িয়েছে। বিপরীতে আত্মিক উন্নতি আরও অধরা হয়ে গেছে। এর জন্য কিন্তু বিজ্ঞান দায়ী নয়, আমরা যারা ভোক্তা বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সুবিধাভোগী তারাই দায়ী। চাইলেই কিন্তু আমরা হাতের মোবাইল ফোনটি দিয়ে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, চায়নিজ, জাপানি ইত্যাদি ভাষা রপ্ত করে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারি। পারি যে কোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করতে। কিন্তু আমরা এসব ব্যবহার করছি ভুল পথে।
আসলে প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারই শান্তির খোঁজে হয়রান মানুষের অশান্তি উসকে দিচ্ছে। মানুষ ভাবে ওই নতুন মডেলের গাড়িটি কিনতে পারলে আমি সুখী হব। কিংবা লেটেস্ট ভার্সনের ফোনটি হাতে এলে জীবন আনন্দে ভরপুর হয়ে যাবে। এমন ভুল চিন্তা নিয়ে লোকটি মার্কেটে যায় এবং গাড়িটি কেনে। যখন সে গাড়িতে বসে বা স্বপ্নের ফোনটি হাতে নেয় তখন অল্প সময়ের জন্য তার হৃদয়ে আনন্দের ঝংকার ওঠে। কিছু সময় বা কিছুদিন যাওয়ার পর সেই মেকি আনন্দ, নকল উচ্ছ্বাস যখন উবে যায় তখন মানুষটির টনক নড়ে ওঠে। হায়! যে সুখের আশায় দামি গাড়ি, দামি বাড়ি, দামি ফোন কিনলাম সেই সুখ তো ধরা দিল না। মনের অশান্তি অস্থিরতা তো কাটে না, বরং আরও বেড়ে গেল।

কেন এমন হয়? আসলে আমরা যখন ভুল জায়গায় শান্তি খুঁজি তখনই যন্ত্রণা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে একটি উদাহরণ দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা।

আল্লাহ বলেন, ‘মাসালুহুম কামাসা লিল্লাজি নাসতাওকাদা নারা, ফালাম্মা আদাআত মা হাওলাহু জাহাবাল্লাহু বিনুরিহিম ওয়াতারাকাহুম ফি জুলুমাতিল্লা ইউবসিরুন। অর্থ : ওদের উপমা হচ্ছে এমন ব্যক্তির, যে আগুন জ্বালাল। আগুনে চারপাশ আলোকিত হওয়ার পরই আল্লাহ সে আলো সরিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওরা ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেল। অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখার থাকল না।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৭)

প্রিয় পাঠক! চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের মরু আরবের গভীর রাতের দৃশ্য। চাঁদহীন আকাশ। একটি তারকাও দেখা যাচ্ছে না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে একদল মানুষ ভয়ে তটস্থ। যে কোনো মুহূর্তেই শত্রু আক্রমণ করতে পারে কাফেলা। কানে আসছে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের গর্জন। এমন ভয়ংকর অন্ধকারে এক ব্যক্তি আগুন জ্বালাল। চারপাশ আলোয় ভরে উঠল। সবাই খুশি। যে যার মতো রাতের কাজে মন দিল। কেউ রান্না করছে। কেউ গোছগাছ করছে। হিসাব মেলাচ্ছে কেউ। কেউবা আবার আড্ডা জমিয়েছে। হঠাৎ দপ করে আগুন নিভে গেল। যে যেখানে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থাতেই ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেল। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মুখে না বললেও সবাই বুঝতে পারছে ক্ষণিকের আলোটুকু তাদের প্রতি ছিল উপহাসের। কাজ শেষ হলো না, আলোও আসছে না- এক সীমাহীন যন্ত্রণায় তারা হাবুডুবু খাচ্ছে।

মোটা দাগে এই হলো আয়াতে বলা উপমার সার কথা। আসলে অন্ধকারে ডুবে থাকা ওই কাফেলা হলো তারা, যারা আল্লাহর নুর বাদ দিয়ে বস্তুতে সুখ-শান্তি খুঁজে বেড়ায়। সুখের ঠিকানা মনের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শরীরের আরাম-আয়েশকেই সুখ বলে ভুল বোঝে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। বস্তু মেলে কিন্তু সুখ মেলে না।

ভাবনার বিষয়, একদল মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আগুন জ্বালিয়ে পেল তাপ ও যন্ত্রণা, অন্যদিকে হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিনিময়ে আগুনের ভিতর পেলেন ফুলের বাগান। এ দুটি ঘটনা পৃথিবীবাসীর সামনে একটি সহজ সত্য তুলে ধরে। দুনিয়ার মানুষ সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য উপকরণের ওপর নির্ভরশীল হয়, কিন্তু প্রকৃত সুখ-শান্তি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আমরা মনে করি, অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য সুখ-শান্তির চাবিকাঠি। ভালো বেতন, ভালো চাকরি, দামি গাড়ি এসব থাকা সত্ত্বেও বান্দার জীবনে সুখ নামক পাখিটি অধরা থেকে যেতে পারে যদি তার ভিতর আল্লাহর নুর তথা আল্লাহ ও রসুলের প্রেম না থাকে। আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন।

রৌমারীতে সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে দু‘গ্রুপে মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়া

রৌমারী সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি বন্ধের পর থেকে দখলবাজদের উৎপাত বেড়ে যায়। অবশেষে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে দু‘গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x