সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পাল্টাপাল্টি মামলা-হামলা

মাসুদ রানা : মানিকগঞ্জেরসিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পাল্টাপাল্টি মামলা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে করে উভয় পক্ষের ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা বড়পাড়া গ্রামের উপজেলা মটর শ্রমিকলীগ নেতা আকাশ আহমেদ নয়ন (৪০) গ্রুপ ও কথিত যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ছাহিম (৪২) গ্রুপের মধ্যে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজের কর্তা ব্যক্তিদের উদাসিনতা ও একচোখা পক্ষপাতিত্বের দরুণ দীর্ঘ দিনের জমি সংক্রান্ত অমীমাংশিত বিবাদ এক সময় রুপ নেয় পাল্টাপাল্টি মামলা-হামলায়। এখনো উভয় পক্ষে নিরব উত্তেজনা বিরাজ করছে, যেকোন সময় ঘটতে পারে হতাহত ও প্রাণ হানির মত ঘটনা।জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলা মটর শ্রমিকলীগের আহবায়ক আকাশ আহমেদ নয়ন প্রায় ২২ বছর আগে ছাহিমের বাবা মোহন মিয়া (৭০) এর নিকট হতে জমি কিনে সেখানে ঘরবাড়ি তোলে বসতি স্থাপনা শুরু করেন।

একই সময়ের দিকে নয়নের মা আমেনা বেগম (মৃত) ও বড় বোন ময়না বেগম (৫৫) জমি কিনে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। অন্যদিকে সন্তানদের কৃতকর্মে অসুন্তুষ্ট হয়ে সন্তানদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সমস্ত জমিজমা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে কুষ্টিয়া গিয়ে বিয়ে করে সেখানে জমিজমা কিনে বসবাস শুরু করেন মোহন মিয়া। বাবার সমস্ত জমিজমা এভাবে বিক্রি করে দেয়া সহজে মেনে নিতে পারেনি তার ৭ ছেলে সন্তানরা। বাবার বিক্রি করা জমিতে দখল না দিয়ে উল্টো মারধর করে তাড়িয়ে কয়েক খন্ড জমি দখলে নেবার অভিযোগ রয়েছে তার সন্তানদের বিরুদ্ধে। নয়নদেরজমিতেও কয়েক দফা হানা দিয়েও হিতের বিপরীত হয়েছে।

২ বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছাহিমের বড় ভাই আব্দুর রহিম প্রতিপক্ষের মারাত্বক আঘাতের শিকার হয়। তবে প্রতিপক্ষের লোকজন এটা অস্বীকার করে বলেন, রহিম চুরি, ডাকাতি, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধে নিকটস্থ থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা রয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজন আরো বলেন, চুরি করে ধরা খেয়ে পার্শ্ববর্তী বাস্তা গ্রামের আব্দুল লতিফের বাড়িতে রহিম ও ছাহিমকে রশি দিয়ে বেধে রাখে। পরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিরোধ মীমাংসীত হয়। এছাড়াও একই গ্রামের মগর আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম (৩৫) এর কাপড়ের দোকানে চুরির অভিযোগে ছাহিম ও রহিমসহ কয়েক ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাওহয়েছিল। এছাড়া ২০০২ সালে ছাহিম আব্দুল বারেক (৪৫) এর স্ত্রী সুফিয়া বেগম কে ফকিরি তাবিজ কবজ করে বশীভূত করে ভাগিয়ে নিয়ে নগদ অর্থসহ স্বর্ণালঙ্গকার ও মালামালসহ দামি আসবাবপত্র কৌশলে দখলে নেয়। এ বিষয়ে নয়ন ও তার ভাইয়েরা বিচার চাইলে ছাহিম উল্টো আদালতে মিথ্যে মামলা দায়ের করে। মামলায় ঘটনার সত্য বলাতে অন্যান্যদের সহ তার চাচা আলীমুুদ্দিন ও চাচাতো ভাই আলমাসকেও সে মামলায় আসামি করা হয়।

পরে সেটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তদন্তভার এলে সেখানে ছাহিমকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি মিমাংশীত হয়। এদিকে হুশ ফিরে আসার পর বারেকের স্ত্রী সুফিয়া বেগম লজ্জায় স্বামীর সংসার ত্যাগ করে চলে যায়। তাই সভাবত কারণেই দুই পক্ষে বিরোধ লেগেই থাকতো। পরিশেষে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল নয়নের ভাগিনা মনির হোসেন (৩৫) কে টেঁটাবিদ্ধ করে ছাহিম গ্রুপ। এ ঘটনায় নয়ন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, ছাহিম ও তার ভাই সাইফুল (৪০), রহিম (৪৫) ও দ্বীন ইসলাম (৩০) এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। এতে ভাগিনা মনির তাদের নিষেধ করলে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মনিরকে দা দিয়ে কোপ ও টেঁটাবিদ্ধ করে উল্টো পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে মনিরের রক্তে রঞ্জিত মাটি দেখতে পান। ভাগিনা মনিরকে অসুস্থ অবস্থায় তার মামা নয়ন সিংগাইর সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরোক্ষনেই মামলা করতে থানায় যান। নয়ন বলেন, মামলা করে পুনরায় হাসপাতালে ফিরে গিয়ে ভাগিনার দেখভাল করি এবং হাসপাতালেই রাত্রী যাপন করি।এরপর ২০২০ সালের ১৭ জুন ছাহিম গ্রুপের রহিম বাদী হয়ে তার ভাই সাইফুল ইসলামকে কোপানোর অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে সম্প্রতি করোনার মহামারিতে উপজেলা মটর শ্রমিকলীগের নেতা আকাশ আহমেদ নয়ন তার নিজ এলাকার দরিদ্র ও অসহায় এমন প্রায় ৭০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এতে করে এলাকায় বেশ যশ-খ্যাতি ও সুনামসহ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ ক্ষোভে ঈর্ষানিত হয়ে নয়নের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে হাত মেলায় ছাহিম গ্রুপের সঙ্গে। নয়নের পক্ষে বলাতে একাধিক দরিদ্র লোকের ভাতার কার্ডও বাতিল করার অভিযোগ তোলেন আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আব্দুল হামিদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গত রোববার ১২ টার দিকে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাহিম গ্রুপের সাইফুল ছাড়া অন্য কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সাইফুল অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে নয়নের বড় ভাই হযরত আলী (৬৫) কুপিয়ে রক্তাক্ত যখম করেছে। এর আগে আমার বড় ভাই রহিমকেও কুপিয়েছে। ওদের ভয়ে আমরা খুব আতঙ্কে আছি।সিংগাইর উপজেলা মটরশ্রমিকলীগ নেতা আকাশ আহমেদ নয়ন বলেন, রহিমকে কোপানোর দায়ে আমার বড় ভাই হযরত আলীকেআসামী করে থানায় মামলা করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কেননা ঐ ঘটনার ৩ দিন আগে আমার ভাই ঢাকার ইবনেসিনা হাসপাতাল হতে কিডনী ও প¯্রাবের থলির অপারেশন করে আসে। ডাক্তার তাকে বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন।ছাহিমের বাবা মোহন মিয়া তার ছেলেদের অত্যাচার সইতে না পেরে সমস্ত জমি বিক্রি করে গ্রাম ছেড়েছে। আমি ৯.৭৫ শতাংশ জমি মোহন মিয়ার কাছ থেকে সাব-কবলা দলিল মূলে কিনেছি। অথচ জমির মূল দলিল বিক্রির পূর্ব হতেই লোন নিয়ে জয়মন্টপ কৃষি ব্যাংকে রেখে গেছেন তিনি। ব্যাংক লোন পরিশোধ করে আমাকে এখনো সে দলিল দেয়া হয়নি।

এছাড়াও আমি সম্প্রতি মহামারি করোনার প্রাক্কালে নিজ এলাকার দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ এমন প্রায় ৭০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ আমার উপর ঈর্ষানিত হয়ে ছাহিমদের সাথে হাত মিলিয়েছে।হামিদের ভয় আমি যদি ইউপি নির্বাচন করি তাহলে নির্বাচনে জিততে তার সমস্যা হবে। আমি সিংগাইর উপজেলা মটর শ্রমিকলীগের আবহবায়ক এবং সাবেক মটর চালকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। কখনো ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার সাদ নেই আমার। আমি মানুষ হিসেবে শুধু মানুষের পাশে থাকতে পছন্দ করি। মানুষের বিপদে এগিয়ে যাই। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করে রাজনীতি করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে ছাহিমের চাচাতো ভাই ইদ্রিস আলী (৫০) ও সোবহান (৫৫), চাচা দারোগালী (৬৬), চাচী নুরজাহান বেগম (৬০) এবং খাদিজা (৪০) নামের এক মহিলা ছাহিমদের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিভৎস বর্ণনা দেন।ইদ্রিস আলী বলেন, আমাকে নিরীহ পেয়ে আমার জমিতে ছাহিমরা কয়েক ভাই মিলে বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছে। আমার ঘরের জানালাটা পর্যন্ত খুলতে পারিনা ।

ওদের কিছু বলতেই রাম দা ও লাঠিসোটা নিযে সব ভাই একত্রিত হয়ে আমাকে বাড়িতে ঢুকে মারতে আসলে ভয়ে আমার বাবা হুকুম আলী ষ্ট্রোক করে মারা যান। সোবহান বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে নিজের জমি হতে মাটি কাটার সময় ছাহিমরা কয়েক ভাই মিলে বড় বড় দা ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাকে ধাওয়া করে। দীর্ঘ দিন পর আদালতের মামলায় জয়ী হবার পর পুনরায় ঐ জমিতে নিরাপদে দখলদার বুঝে পাই। দারোগালি বলেন, ছাহিমরা অনেক খারাপ লোক। আমাদের নিরীহ পেয়ে বিভিন্ন সময় জুলুম অত্যাচার করে। নুরজাহান বলেন, ওরা আমার জমি হতে চুরি করে মাটি কেটে নিয়ে যায়। ওদের অত্যাচারে ওর বাবা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। খাদিজা বলেন, প্রায় ৪ বছর হয় এ এলাকায় ৪ শতক জমি কিনেছি ঘরবাড়ি তৈরী করে থাকার জন্য। কিন্তু ছাহিমরা সব সময় আমার পিছু লেগে থাকে। আমার জমি হতে চুরি করে মাটি কেটে নিলেএটা বলাতে আমাকে ওরা কয়েক ভাই মিলে মারতে আসে। আরেকদিকে ধল্লা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সানোয়ার হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নয়ন ও ছহিমদের বিরোধ নিয়ে আমার যে বক্তব্য প্রদান করেছে সেটা মিথ্যা। আমি সাংবাদিকের নিকট এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দেয়নি এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ভূইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

দুঃশাসন মূলোৎপাটনে জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

জনগণের সম্মিলিত শক্তির কাছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজয় বরণ করতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x