কারো তুলিতে ফুটে উঠলো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কোলে বসে খাবার খাচ্ছে ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল। পাশে বসে হাসি-ঠাট্টায় মশগুল বড় ভাই শেখ কামাল, শেখ জামালসহ অনেকে। কেউ আঁকলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত জাতির জনকের কনিষ্ঠ পুত্রটি। আবার কারো তুলিতে ফুটে উঠলো ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু রাসেলের বুক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে।
আজ সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় এভাবেই শহীদ শেখ রাসেলের নানা স্মৃতি রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন ছোট্ট সোনামনিরা। আঁকিয়েদের সবার বয়স ১১ বছরের কম হলেও তাদের আঁকা চিত্রকর্মে যেন ফুটে ওঠে বাংলাদেশের ইতিহাস।
এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ক্লাবের মাঠটি মুখর ছিল শিশুদের পদচারণায়। সবার হাতে ছিল রং-তুলি আর স্কেচবোর্ড। ‘শহীদ শেখ রাসেল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা-২০২১’ এ অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজির হয় প্রায় দুইশ’ খুঁদে প্রতিযোগী।
প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। শেখ রাসেলের জীবনের নানা মুহূর্ত ফুটে ওঠে শিশুদের রং তুলিতে। বিচারকদের মন জয় করে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনহাজ জামান।
দ্বিতীয় হন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিথিলা ভৌমিক ও তৃতীয় হয়েছেন নারায়ন আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রেয়সী সাহা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
তিনি খুঁদে চিত্রকরদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আগত অতিথি ও শিশুদের নিয়ে কেক কাটেন। এরপর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের চেক, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দ লাবলু, পরিচালক (ক্রীড়া) সালেহ জামান সেলিম প্রমুখ।
প্রথম পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী পেয়েছে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার ছিল ২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও স্কুল ব্যাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। প্রতিযোগীদের মধ্যে ২৭ জনকে শুভেচ্ছা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় স্কুল ব্যাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। অংশগ্রহণকারী সকলকেই সার্টিফিকেট ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘শেখ রাসেলকে নিয়ে যা আঁকতে ভালো লাগে’। দেড় ঘণ্টার প্রতিযোগিতায় শিশুরা মনের মাধুরি মিশিয়ে রঙ-তুলিতে নিজের মতো করে আঁকেন শেখ রাসেলের জীবনের নানা মুহূর্ত।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারক ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন, সহকারী বিচারক ছিলেন শহীদ আনোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের চারুকলা শিক্ষক শেখ ফারহানা টুম্পা এবং তরুণ শিল্পী ও কালের কণ্ঠের কার্টুনিস্ট প্রসূন হালদার।
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দ লাভলু বলেন, শহীদ শেখ রাসেল নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের কাছে এক ভালোবাসার নাম। শেখ রাসেলের এই ছোট্ট জীবন আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজনের বিষয়ে অভিভাবকরা বলেন, করোনার কারণে শিশুরা দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল। তারা মানসিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই সময়ে। সকল ধরনের আয়োজন বন্ধ থাকায় কোথাও অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না তাদের।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় শিশুরা খুব আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। এমন আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তারা।