৫০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের প্রস্তুতি

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে যশোর ও সাভারে জমে উঠেছে ফুলের বাজার।

আহমেদ সাঈদ বুলবুল, যশোর অফিস থেকে জানান, ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে ‘ফুলের রাজধানী’ নামে খ্যাত যশোরের গদখালী। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে গদখালীর ফুলের বাজার এখন জমজমাট। সব ফুলের চাহিদা থাকলেও বিক্রির ক্ষেত্রে গোলাপ অন্য সব ফুলকে ছাড়িয়ে গেছে। এবার গোলাপ পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙেছে। গতকাল রবিবার রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২৫ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গতকাল এক দিনেই ১ কোটি টাকার গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে গদখালীর পাইকারি ফুলের বাজারে। পাশাপাশি গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনিগন্ধা ফুলের দামও চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিবস দুটি ঘিরে এ অঞ্চলের চাষিরা গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এবার চড়ামূল্যে ফুল বিক্রি করতে পারায় গত দুই বছরের করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে ফুলচাষিরা আশাবাদী।

রবিবার ভোর থেকেই সরব হয়ে ওঠে গদখালীর পাইকারি বাজার। বাইসাইকেলে, মোটরসাইকেলে, ভ্যানে—যে যেভাবে পারছেন, নানা জাতের ফুল নিয়ে গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে হাজির হচ্ছেন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়। ৭টা নাগাদ হাট জমজমাট হয়ে উঠে। উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা ফুল কিনতে এ বাজারে আসেন। ফুলচাষি ও বেপারিদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা প্রাঙ্গণ। ফুল কিনে বেপারিরা বাসের ছাদে, ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু ও পিকআপে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। ১০টার মধ্যে হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়।

দিবস দুটির আগে রবিবার ছিল সবচেয়ে বড় হাট। এই হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গোলাপ চাষি। ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উৎসবে গদখালীর গোলাপ সারা দেশে সৌরভ ছড়াবে। গদখালীর ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এক দিনেই গদখালী বাজার ও গোলাপের খেত থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। অন্তত ৫০০ ফুলচাষি গোলাপ ফুল নিয়ে মোকামে আসেন। সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষি আব্দুর কাদের বলেন, বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপ কখনোই ১৫ টাকার বেশি হয়নি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এবারে সব কৃষকই লাভবান হবেন। গদখালী এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি। সালাম হোসেন জানান, এ সময় গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তরুণীরা চুলের খোঁপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। গতকাল প্রতিটা জারবেরা ১০ থেকে ১৫, রজনিগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বেচাবিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গত পাঁচ দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত ৩ কোটি টাকার গোলাপ ফুল সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। দিবস দুটি ঘিরে এ অঞ্চলের চাষিরা গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
যশোর জেলার ১২টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। এ অঞ্চলের ৬ হাজার চাষি ফুল উৎপাদন করেন। সারা দেশের চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়।

সাভারে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

তুহিন খান, সাভার থেকে জানান, পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে সাভারের ‘গোলাপ গ্রাম’ খ্যাত বিরুলিয়ার ফুলচাষিদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। ভালো দামে ফুল বিক্রির মাধ্যমে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ভোর থেকেই বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। তারা বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ ফুলের চাষ করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। শুধু গোলাপ চাষ করেই ভাগ্য বদলেছেন এলাকার অনেক মানুষ, হয়েছেন স্বাবলম্বী। অনেক বেকার যুবক গোলাপ চাষকে স্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহণ করে হয়েছেন স্বনির্ভর। বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ক্রমান্বয়ে গোলাপ ফুল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৫০০ কৃষক ৩০০ হেক্টর জমিতে বছর জুড়েই বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করেন। হলুদ গাঁদাও চাষ করা হয় এই এলাকায়। এছাড়া বিদেশি ফুল জারবেরা, মাম, জিপসি, গ্লাডিওলাসের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গোলাপের। বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এবার সাভারের ফুলচাষিরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর, কোমারখোদা, মৈস্তাপাড়া, আক্রান, বাঘ্নিবাড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে ফুলচাষিদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। এছাড়া সাদুল্লাপুর, ভবানীপুর গ্রামে মাঠের পর মাঠ জুড়ে রয়েছে গোলাপবাগান। ফুটে আছে লাল, সাদা, হলুদসহ নানা রঙের গোলাপ। চারদিকে তাকালে মনে হয় যেন গোলাপের রাজ্য। গোলাপচাষিরা জানান, শুক্রবার, নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি থাকে। একবার গোলাপের চারা রোপণ করলে পাঁচ-সাত বছর গোলাপ বাগানের স্থায়িত্ব থাকে। বিভিন্ন রঙের গোলাপ চাষের পাশাপাশি এ এলাকায় জারবেরা ও রজনিগন্ধা ফুলের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বছরে প্রতি একর জমি থেকে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা আয় হয়। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, সামনের তিনটি দিবসে চাষিরা যাতে ফুলের ন্যায্যমূল্য পান সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সাহিত্যের আলো ছড়াচ্ছে বরিশাল থেকে প্রকাশিত অবেলার ডাক

অবেলার ডাক সবার জন্য সাহিত্য ম্যাগাজিন নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন গত ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে নিয়মিত...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x