গ্রামীণফোন ও রবির অডিট আপত্তির টাকা আদায়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগেও ফল না আসায় কোম্পানি দুটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে টাকা আদায় করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগ এখন সময়ের ব্যাপার। বিটিআরসি প্রশাসক নিয়োগে যে অনুমতি চেয়েছিল, তাতে আজই আমি সম্মতি দিয়েছি।’ আর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।এদিকে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বিটিআরসির পাওনা আদায় প্রক্রিয়ার ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আদালতের আদেশের কোনো কপি আমরা পাইনি। কপি পেলে আইনগতভাবেই মোকাবিলা করা হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বিটিআরসি সবদিক বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিদের প্রশাসক নিয়োগ করবেন।গ্রামীণফোনের কাছে অডিট আপত্তি দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি বিটিআরসির। কয়েক দফার চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিশ পাঠানো হয় এই দুই মোবাইল ফোন অপারেটরকে। অন্যদিকে টাকার ঐ অঙ্ক নিয়ে আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোন ও রবির। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতে যায়।
প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি এটা ফরমুলেট করবে। প্রশাসক কাকে নিয়োগ করা হবে, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ নেব। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। টাকা আদায় হয়ে গেলে প্রশাসক আর থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসক নিয়োগের পর এনওসি চালু করা হতে পারে। ব্যবসা ও লাভের জন্য এনওসি দরকার হবে। তবে তাদের টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্স স্থগিত থাকবে।
জানা গেছে, পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত ১৫ দিন লাগতে পারে। সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে বিটিআরসি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ফলাফল জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, গ্রামীণফোন ও রবি তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। গত ৩ অক্টোবর তাদের সঙ্গে শেষ বৈঠক হয়। সাত দিনের মধ্যে রবির ২৫ কোটি এবং গ্রামীণফোনের ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রবি ১৫ কোটি টাকার পে-অর্ডার নিয়ে এলে আমরা তা অ্যালাও করিনি। এক মাস পরপর এভাবে ২৫ কোটি ও ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতে তারা সাড়া দেয়নি। ফলে আমাদের সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা নেই।
জানা গেছে, গ্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসকসহ যে চারজন করে নিয়োগ দেওয়া হবে, তার মধ্যে প্রধান নির্বাহী পদমর্যাদার একজনকে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। এর বাইরে একজন আইনবিদ, একজন প্রকৌশলী এবং একজন মার্কেটিং ও ফাইনান্স বিষয় দেখভাল করবেন। এ মাসের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে।
গ্রামীণফোনের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন সাংবাদিকদের বলেন, নিম্ন আদালতে আমরা একটা টাইটেল স্যুট (স্বত্বের মামলা) ফাইল করেছিলাম। ঐ টাইটেল স্যুটটা অ্যাডমিটেড হয়ে নিম্ন আদালতে পেন্ডিং আছে। ঐ টাইটেল স্যুটের অধীনে আমরা বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছিলাম, সেটা গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত খারিজ করে দেয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে অবকাশের সময় আপিল করেছিলাম। সেটি গ্রহণ করে বিটিআরসি তাদের পাওনা আদায়ের জন্য যাতে কোনো ব্যবস্থা না নেয় সেজন্য হাইকোর্ট দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।