শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি
নোভেল করোনা ভাইরাসের আতংকে যখন সমগ্র পৃথিবীর মানুষ নিজের জীবন বাঁচাতে ঘরে বন্দি হয়ে আছে সেখানে সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাক এর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সাধারণ ছুটিকে উপেক্ষা করে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছে। এতে করে ব্রাকের উপর আত্মনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের এমন কর্মকান্ডের ভুয়সী প্রমংসা করেছেন তারা।
শেরপুর উপজেলার ব্রাক অফিসসূত্রে জানা যায়, নোভেল করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে এবং মানুষকে সচেতন করতে করোনার শুরু থেকেই ব্র্যাক এর নির্দেশনায় শেরপুর এলাকার সকল কর্মী লিফলেট বিতরণ, জনপ্রিয় বাউল শিল্পি কুদ্দুস বয়াতি ও মমতাজ এর করোনা বিষয়ক জন সচেতনা মুলক গানের মাইকিং, ষ্টিকার লাগানো, মসজিদের মসুল্লীদেরকে সচেতন করা, সকল শ্রেণীর চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, ভ্রাম্যমান লোকদের হাত ধোয়ার জন্য বগুড়া সিরাজগঞ্জ রোডের বিভিন্ন জনগুরত্বপূর্ণ বাজারে বেসিন স্থাপন করা, শেরপুর পৌরসভার সকল স্থানে জীবানু নাশক স্প্রে করা হয়। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় দুরত্ব বৃত্ত অংকন করা, মোবাইলে গ্রাহকদের খোজ খবর নেওয়া, সচেনতার পাশাপাশি মানবিক সহায়তায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এছাড়াও শেরপুর এলাকার অফিসের মাধ্যমে ৩৯৮ টি দরিদ্র পরিবারের মাঝে ১ হাজর ৫০০ টাকা করে মোট ৫ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা নগদ অর্থ ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ১ হাজার ২৯৫ জন সদস্যাকে ২ হাজার টাকা করে মোট ২৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা সঞ্চয় ফেরত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা চলমান রাখতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কিস্তি আদায় না করেও ২৮৭ জন সদস্যাকে চাহিদা অনুযায়ী ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে যাহা (চলমান) এবং অফিসে আগত সদস্যদের মাঝে সুরক্ষা প্যাকেজ হিসেবে ২টি করে ডেটল সাবান ও ২ প্যাকেট হারপিক পাউডার দেওয়া হচ্ছে।
ব্র্যাকের শেরপুর এলাকা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সঙ্কটকালিন সময়ে ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সদস্য-সদস্যাদের চাহিদা মাফিক ঋণ প্রদান, গ্রামীণ কৃষিকে সচল রাখতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি ঋণ প্রদান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্য-সদস্যাদের সঞ্চয়ের টাকা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।
ব্র্যাকের গ্রাহক আছমা বেগম বলেন, আমরা ব্র্যাকে সঞ্চয় জমা রেখেছিলাম। বিপদের দিনে সেই সঞ্চয় ফেরত দিয়েছে ব্র্যাক। করোনাভাইরাসের কারণে ব্র্যাক থেকে প্রতিদিন নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন। ঘরে খাবার আছে কি-না। আর্থিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি-না। আমাদের কাছে না যেতে পারলেও মোবাইলে সবধরণের ভবর নিয়েছেন ব্র্যাক অফিসের কর্মকর্তারা। ঋণের কোন প্রকার চাপ নাই। ব্র্যাক অফিস থেকে বলেছেন যারা পারবেন বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিবেন না পারলে কোনচাপ নাই। সঞ্চয়ের টাকা নিতে এসেও কোন প্রকার হয়রানীর শিকার হই নাই। বরং তাদের আন্তরিকতা তাদের প্রতি আরো সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্র্যাকের এধরণের কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়।
ব্র্যাকের শেরপুর এলাকা ব্যবস্থাপক মোঃ হাসানুল কবীর বলেন, প্রতিদিন অফিস এর সকল স্থান জীবানু নাশক দিয়ে পরিস্কার করার মাধ্যমে এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অফিসের কার্যক্রম চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী কাউকে ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে না। বরঞ্চ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আমরা ঋণ প্রদান করছি। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে ডিপোজিট ও সঞ্চয়ের টাকা কেউ নিতে চাইলে ক্যাশ এবং বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। তবে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো আছে তারা সেচ্ছায় বিকাশের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্র্যাক ১৯৭২ সাল থেকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অতিদরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ ও পূর্ণবাসন এর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। দেশের সকল দুর্যোগে ব্র্যাক জনগনের পাশে ছিলো এবারও এই বৈশ্বিক এই দূর্যোগ মুহুর্তে ব্র্যাকের কর্মকান্ডে সংক্রিয় অংশগ্রহন করতে পেরে নিজেকে একজন গর্বিত মানুষ হিসেবে আত্বপ্রকাশ করতে পেরেছি। যেখানে সরকারের সাধারণ ছুটিতে জনগন ঘরে বসে আছে সেখানে ব্র্যাক এর কর্মীগন বাড়ি না গিয়ে সর্বদা জনগনের পাশে ছিলো।
ব্র্যাকের জেলা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক কে এ রহমান এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস সংক্রামণের প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় ব্র্যাক। ব্র্যাকের উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ, সাবান বিতরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদান, ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকারের সহায়তা মুঠোফোনের মাধ্যমে গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে।