জাকির সিকদার, রাজাপুর (ঝালকাঠ )সংবাদদাতা
ঝালকাঠির রাজাপুরে গত ৩/৪ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু ব্যাক্তিরা হলো চাড়াখালী গ্রামের সাইদুল ফরাজী, জগৈরহাটের/ বাঘরীর আলম,রাজপুর হাসপাতালের সাবেক নার্স কহিনুর ও মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরমোহাম্মদ।
তিনি (নুরমোহাম্মদ) রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত ৫ দিন আইসোলেশনে ছিলেন।
এ নিয়ে রাজাপুরে করোনা ভাইরাসে আত্রুান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫ জনের মধ্যে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
গত ৩ দিনে শতকরা ৬৩ ভাগ করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে ১ম দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ জন যা শনাক্তের সংখ্যা বিগত দিন গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৯ জন। সাংবাদিক রুহিদাসের দম্পতির স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত।সর্বোচ্চ ৬৩% করোনায় আক্রান্ত রাজাপুর উপজেলা, ঝালকাঠি ৬৫% আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কতর্পক্ষ করোনায় আত্রুান্ত হয়ে ভর্তি রোগীদের জন্য ১২ বেডের একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে রুপান্তিত করেছেন। এ নিয়ে হাসপাতালে মোট করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ টিতে।
সরকার ঘোষিত বৃহাস্পতিবার (১ -৪ জুলাই) থেকে কঠোর বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রসাশনের পাশাপাশি সেনাবাহিনি ও পুলিশ বাহিনিকে মাঝে মাঝে টহল ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে দেখা যায়। তবে তারা সরে গেলেই বাজার গুলো পরিপূর্ণ হয়ে যায় জনসাধারণে, খুলে যায় দোকান পাট চলে বেচাকেনা ও আড্ডাবাজি। এ উপজেলার জনসাধারণের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করেই বাজারে আসতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লির উপস্থিতি কম ছিল। মুসল্লিরা পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা-যাওয়া করেছেন। মুসজিদে ইমামরা উপস্থিত মুসল্লিদের মহামারি থেকে বাঁচতে কোরআন-হাদিসের আলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন ও সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। জুমার জামাত শেষে করোনা থেকে মুক্তির জন্য মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
বিধি নিষেধ বাস্তবায়ন সর্ম্পকে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনার সংত্রুমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা দিনভর মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যেই এ থানার একাদিক পুলিশ সদস্য করোনায় আত্রুান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে চাহিদা মোতাবেক সহয়তা করে যাচ্ছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে রাজাপুর থানা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন তালুকদার এ ব্যাপারে বলেন,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজাপুরে সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজে সরকারের সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, রাজাপুরে পুলিশ কর্মকর্তারা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তবে রাজাপুরে বেশি করোনার প্রভাব দেখা দিয়েছে,এজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন রাজাপুরবাসীর জন্য।
রাজাপুরে করোনায় মৃত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনিরুজ্জামান মনির।তিনি সকলকে নিরাপদে থাকার আহবান জানান।
এছাড়া রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যডঃ সরফরাজ এবং সাধারণ সম্পাদক জিয়া হায়দার খান লিটন করোনাকালীন অযথা ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলেছেন।
এছাড়া রাজাপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু সবিনয়ে অনুরোধ করেন বিনা কারনে ঘোরাঘুরি না করার জন্য।
অপরদিকে
রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান বলেন, রাজাপুরে করোনার প্রকোপ বেশি তবুও আমরা করোনা টিকা দ্বিতীয় ডোজ দিতেছি,মাঠে প্রশাসন কাজ করছে করোনা থেকে বাচঁতে প্রতিরোধ, বিধিনিষেধ করছেন।
রাজাপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কামরুজ্জামান দুলাল বলেন, আমরা হঠাৎ করোনায় আক্রমণে পড়েছি বেশি, এ জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য সকল মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করেন।
এ ব্যপারে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের, বিএনপির, ঈশা আন্দোলন, জাকের পার্টির সবাই সকলের সকলেকে নীজ দায়িত্বে নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকের চেয়ারম্যান বলেন, আল্লাহ ছাড়া মহামারি সংক্রান্ত রোগবালাই থেকে বাঁচাতে কেহই পরেননা,তার কাছে ক্ষমতা তিনিই জানেন কার কি ধরনের মৃত। তাই সকলের উচিত করোনাকালীন সতর্কতা অবলম্বন করা।সরকারের আদেশ নিষেধ মেনে চলা।
মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল,শুক্তাগড় চেয়ারম্যান বিইউটি সিকদার,সাতুরিয়া চেয়ারম্যান নিপু,গালুয়া চেয়ারম্যান পারভেজ,বড়ইয়া চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া বলেন, করোনা কালীন অযথা বের না হওয়া।
রাজাপুর সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি কালাম বলেন, করোনার সময় যথাসময়ে টিকা নিন,মাস্ক পড়ুন,ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
রাজাপুর যুবলীগের বাপ্পি মৃধা বলেন, করোনার জন্য আতংকিত না হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকুন,নাসির মৃধা বলেন,রাজাপুরে সরকারের পাশাপাশি সকলের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
আলগী মেম্বার বাদশা বেপারী বলেন, করোনা এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে, ভয়ের কিছু নাই, চিকিৎসায় ভাল হবে, যার রক্ত কম সে আক্রমণে পড়বে।
মনোহারপুরের তাওহীদ মেম্বার বলেন, দেশের বালা ঠেকাতে সরকার কাজ করছে, আমি আপনিও কাজে সহযোগিতা করি,রোগ প্রতিরোধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডাঃ রাসেল বলেন, রাজাপুর আমার জন্ম,এখানে সর্বোপরি সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি, কোন কমতি নাই, রোগীর চিকিৎসা ভালো চলছে।৬৪ জেলার তুলনায় আমরা প্রায় ৬৩% করোনায় আক্রান্ত, রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে,এজন্য সরকারের উচিত টিকা বাড়ানো,রাজাপুরে যে হারে করোনায় আক্রান্ত তার জন্য আতংকিত না হয়ে চিকিৎসা নিলে ভাল হওয়ার লক্ষন বেশি, আমিও করোনায় আক্রান্ত ছিলাম প্রথম পর্যায়ে,এখন সুস্থ, সরকারের কাছে দাবী আমার রাজাপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা,ঔষধ সহ সকল ধরনের সহায়তা করার অনুরোধ করেন ডাঃ রাসেল মাহমুদ, তিনি রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা।
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে জেল জরিমানা