পাকা মসজিদটি যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে বালুর বস্তা ফেলে আপ্রাণ চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া এলাকায় পাকা মসজিদটিকে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া ওই গ্রামে একটি পাকা সড়ক তীব্র পানির স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে ভ‚ঞাপুরে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিন্মাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বন্যার পানিতে উপজেলার গোবিন্দাসী, অলোয়া, নিকরাইল, গাবসারা, অর্জূনা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে রোববার সকালে গোবিন্দাসী-কষ্টাপাড়া-ভালকুটিয়া পাকা সড়ক তীব্র পানির স্রোতে ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সেখান মানুষজন। এছাড়া কয়েকদিনের ভাঙনে ওই ইউনিয়নের ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ভালকুটিয়া গ্রামের পাকা মসজিদের একপাশ ভেঙে গেছে।
দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে মুহুর্তেই নদী গর্ভে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ভাঙনের কবলে পড়েছে নদী পাড়ের অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতি। এছাড়া বন্যার পানি প্রবেশ করায় গত তিনদিন ধরে কষ্টাপাড়া ঘোষপাড়া এলাকায় নাটমন্দির, দূর্গামন্দির ও গীতা স্কুল পানিতে তলিয়ে আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
এদিকে সপ্তাহখানেক ধরে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বানভাসী মানুষজন সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে যমুনা নদীতে বিপদসীমার ৩৪, ধলেশ্বরী নদীতে ৪০ এবং ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি ফলে টাঙ্গাইল শহরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বিশেষ করে আমনের ক্ষতি হবার সম্ভবনা রয়েছে। এতে কৃষক ব্যাপক লোকসানে পড়বে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ ও বিক্রি করছে। এতে বন্যার সময় সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সপ্তাহখানেক ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে অর্ধশত পরিবার। ভেঙেছে মসজিদও।
উপজেলার ভালকুটিয়া গ্রামের আব্বাস প্রামানিক বলেন, বন্যার পানিতে রোববার সকালে পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে কয়েক গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে গ্রামের একমাত্র মসজিদটি ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অন্যদিকে নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়কের ঢালে আশ্রয় নিয়েছেন। বসতভিটায় পানি উঠায় বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি কোন সহযোগীতা পাননি বলে অভিযোগ বানবাসিদের।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনাসহ জেলার বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন গ্রামে। যেহেতু পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সেহেতু ভাঙন নিরুপন করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমে গেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।