নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতার আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘২০২৩ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট : বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে মধ্যপন্থি, ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল একটি দেশ। কিন্তু এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এখানকার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ততই অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত গত নির্বাচন অনিয়ম, সহিংসতা ও ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এমন সব নীতি গ্রহণ করেছে এবং পরিস্থিতিকে বৈধতা দিয়েছে যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কথা বলার স্থান সংকুচিত করেছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে এবং মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।

বিনিয়োগ পরিবেশকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৬০টি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন তা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গড়ে শতকরা ৬ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে এ দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কৌশলগত গুরুত্ব ও বিপুল শ্রমশক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো এখানে বিনিয়োগ করেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু করোনা মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে। এর ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা কমেছে। অর্থনীতির বিরূপ প্রভাবের কারণে জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্যের দামও দ্রুত অনেক বেড়ে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে দেশে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮০০ কোটি ডলার থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কমে ৩২২০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে আসে।

বৈদেশিক মুদ্রার এই সংকটের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে (নন-পারফর্মিং লোন-এনপিএল) খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৮০ কোটি মার্কিন ডলার, এর বেশিরভাগই সরকার চিহ্নিত করতে পারেনি।

শ্রম অধিকারের প্রশ্নে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ অধিকার (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস-আইপিআর) ও পরিবেশবিষয়ক বেশকিছু আধুনিক আইন প্রণয়ন করেছে। তবে, এসব আইনের অনেক কিছুই প্রয়োগ করা হয় না।

অবশ্য গত এক দশকে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করলেও শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে সংগঠন করা ও সম্মিলিতভাবে দরকষাকষির অধিকার এখনো সীমিত রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশবিষয়ক বেশকিছু আন্তর্জাতিক সমঝোতায় অংশ নিলেও বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহর।

এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জোরদার করতে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেয়েছে। আইএমএফ’র সূত্রে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ব্যাহত হয়েছে।

এর ফলে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়, টাকার অবমূল্যায়ন করতে হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পায়। ৪২ মাসের আইএমএফ’র কর্মসূচি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল হতে সাহায্য করবে। এই ঋণ দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অরক্ষিত জনগণকে সুরক্ষা দেবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গত এক দশকে বিনিয়োগের বাধা অপসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা বৃদ্ধি। কিন্তু অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, আমলতান্ত্রিক বিলম্ব, শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ ও দুর্নীতির কারণে এখনো বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। সরকার ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে প্রয়াস পেয়েছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ নীতির এখনো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখনো বিকশিত হচ্ছে। আর্থিক খাত ব্যাংকের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। অথচ ২০২২ সালে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে। ১১টি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১০ কোটি মার্কিন ডলার।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিবেদনে সমালোচনামূলক মন্তব্য করে বলা হয়েছে, দেশের বিচারিক কার্যক্রমের গতি কম এবং এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় চুক্তি বাস্তবায়ন ও ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যাহত হয়।

বগুড়ায় আদালত চত্বরে হিরো আলমকে মারধর, কান ধরে ওঠবস

বগুড়ায় আদালত চত্বরে আলোচিত ও সমালোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম হামলার শিকার হয়েছেন। এ সময় তাকে কান...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x