চমৎকার ঝাঁজালো ও লোভনীয় ও জিভে পানি আনার এক খাবার কাসুন্দি। অঞ্চল ভেদে স্থানীয় ভাষায় একে কাসুন্দ বা কাসন্দও বলা হয় থাকে।
বিনে সুতোয় গাঁথা বাঙালি খাদ্য সংস্কৃতির সঙ্গে এটি জড়িত। কিছু বিশেষ পদ আছে যা সরাসরি খাবার হিসেবে আমরা গ্রহণ না করলেও অন্যান্য অনেক খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করে থাকি। বিভিন্ন খাবারের সাথে নিয়ে এটি খাওয়া যায়। ভর দুপুরে কুল বা বরই, পেয়ারা, আমড়া, চালতা, কামরাঙা, জলপাই, কাঁচা আম ও মুড়িতে এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হয়। এগুলোর সাথে কাসুন্দি মেখে ভড় দুপুরে খাওয়ার সাধই আলাদা।
তাছাড়া বিভিন্ন মাছ বিশেষ করে ‘ইলিস কাসুন্দি’ তো আছেই। এভাবে অনেক খাবারের স্বাদ বহু গুণে বাড়িয়ে দেয় কাসুন্দি। টাটকা কাসুন্দির স্বাদ সবসময় অতুলনীয়। এর ঝাঁজ সর্দি-কাশিতে উপশম দেয়। আমাদের দেশে বৃহত্তর এলাকায় এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত। কাসুন্দি বানানোর আসল সময় বোশেখ মাস। এসময় চৈতালি ফসলের সাথে রাই-সরিষা ওঠে। কাসুন্দি তৈরি করার অন্যতম উপকরণ কাঁচা আমও পাওয়া যায় বৈশাখে। এ আম ফালি করে কেটে আঁটি ফেলে দিতে হয়। এরপর খোসা ছাড়িয়ে কুচি কুচি করে কেটে এক খণ্ড কাপড়ে আমের পুঁটলি বাঁধতে হয়। এবার শিল-নোড়ায় আমের কুচিগুলো থেঁতলে রস চেপে ফেলতে হয়।
এভাবেই কাপড়সহ আমের পেষা কুচিকে পরিমাণমতো লবণ ও হলুদ মাখিয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত রোদে শুকাতে হয়। একই সময়ে মরিচ ও রাই-সরিষাকেও রোদে দিতে হয়। এবার বেশ শুকনো অবস্থায় সরিষা ও মরিচ গুঁড়ো করতে হয়। বেতের ধামা কিংবা পাথর বা মাটির একটি গভীর পাত্রে আমের শাঁস রেখে গুঁড়ো রাই-সরিষা ও মরিচ মাখিয়ে পরিমাণ মতো গরম পানি মিশানো হয়। এরপর এগুলো ঠাণ্ডা হলেই হয়ে গেল কাসুন্দি।
সাধারণত গ্রামের মেয়েরা কাসুন্দি বানায়। বর্তমানে কাসুন্দি কুটির শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। অনেক মানুষ কাসুন্দির ব্যবসায় করে রোজগার করছেন। কিছু বড় কোম্পানিও কাসুন্দি উৎপাদন করছে। কাসুন্দি পুরনো হলে খাওয়ার অযোগ্য হয় যায়। পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটাঘাঁটি করলে দুর্গন্ধ বের হয়।
কথায় আছেনা ‘আড়াই কড়ার কাসুন্দি, ‘পুরোনো কাসুন্দি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি’। শীত চলছে এ অবস্থা খাবারের মেনুতে মুর্গ (মুরগি) কাসুন্দি রাখা যেতে পারে। তবে মুর্গ (মুরগি) কাসুন্দি ধনীর জন্য প্রযোজ্য হওয়ায় গরীব সাধারণ হয়ত বেছে নেবে শাক কাসুন্দি