নদীভাঙনের দোরগোড়ায় সমগ্র কোদালকাটি– শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বসতভিটা হুমকির মুখে

“প্রতিবার বর্ষা আসে ধ্বংসের বার্তা নিয়ে, নদীর কূলে দাঁড়িয়ে আমরা দেখি পূর্বপুরুষের ভিটে গিলে খাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য এক জলদানব! অথচ অন্যত্র নদীর তীরে বোল্ডারের বর্ম গড়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা হয়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যে জোটে শুধু প্রতিশ্রুতির শূন্যগর্ভ বাতাস!”—কথাগুলো বললেন কোদালকাটি ইউনিয়নের শিক্ষক ও সমাজকর্মী মোঃ আমিনুর রহমান মাষ্টার।

চর রাজিবপুর উপজেলার অন্তর্গত কোদালকাটি ইউনিয়ন এক সময় কৃষিতে সমৃদ্ধ, শিক্ষায় উন্নত, এবং বসবাসের জন্য নিরাপদ একটি জনপদ ছিল। কিন্তু গত দুই দশকে ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত গ্রাসে এ জনপদের একাংশ হারিয়ে গেছে নদীর বুকে। বর্তমানে কোদালকাটি বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদী থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে অচিরেই এই জনপদ মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বিশেষ করে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নদীভাঙনের তীব্রতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, প্রতিদিন গড়ে ৫-১০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। অনেক পরিবার কয়েকবার করে তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একাধিকবার সরকারি প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করলেও প্রতিশ্রুতির বাইরে কিছুই মেলেনি।

“প্রতি বছর আমরা শুনি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, কাজ শুরু হবে। কিন্তু বছর গড়ায়, নদী গড়ায়, আমরা শুধু শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে থাকি। আমাদের জন্য কি এই রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব নেই?” যোগ করেন আমিনুর রহমান মাষ্টার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, “আমাদের ইউনিয়নের শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তায় বসবাস করছে। কেউ ঠাঁই নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের কাছে, কেউ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। সরকারি সাহায্য নামমাত্র, আর ত্রাণও আসে শুধু বন্যার সময়। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান।”

নদীভাঙনের কারণে কোদালকাটির শিক্ষাব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, “গত কয়েক বছরে আমাদের বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০% শিক্ষার্থী তাদের পরিবারসহ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বারবার বাড়িঘর হারিয়ে তারা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।”

স্বাস্থ্যখাতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কোদালকাটি কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখনো ভাঙনের মুখে রয়েছে। যদি এটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে কয়েক হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা আরও দূরূহ হয়ে উঠবে।

জরুরি ভিত্তিতে কোদালকাটি ইউনিয়নের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ও বোল্ডার ফেলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, স্থায়ীভাবে নদীতীর সংরক্ষণের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লিনিক রক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও ব্যবস্থা গ্রহণ, দীর্ঘমেয়াদী নদী ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবিতে স্থানীয়রা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন ও গণ সাক্ষর জমা দিয়েছেন।

কোদালকাটির ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বলছেন, এবার আর আশ্বাসে কাজ হবে না। তারা বলছেন, “যদি আমাদের কণ্ঠরোধ করা হয়, যদি আমাদের আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়, তবে আমরা দাঁড়াবো—আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, আমাদের বেঁচে থাকার দাবিতে।”

প্রশ্ন রয়ে যায়—এই আর্তনাদ কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছাবে? নাকি কোদালকাটি ইউনিয়নও একদিন ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে, যেমন হারিয়ে গেছে অনেক গ্রাম, অনেক জনপদ?

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’: নাহিদ ইসলাম

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় নাগরিক...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x