মির্জাপুরে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য শালিসে মাতাব্বরগন শিশুর ইজ্জতের মুল্য দেড় লাখ টাকায় রফা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় গ্রাম্য শালিসে ধর্ষককে জুতাপেটা করা হয়। ধর্ষক ফিরোজ ও মাতাব্বরদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে আগামীকাল রবিবার বেলা এগারটায় আজগানা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মানব বন্ধনসহ প্রতিবাদ সমাবেমের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমরা সচেতন নাগরিক নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আজগানা ইউনিয়নবাসি এই কর্মসুচী দিয়েছে বলে জানা গেছে। দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৯২ হাজার টাকা শিশুর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকী ৫৮ হাজার টাকা নিয়ে মাতাব্বরগন লাপাত্তা।
লোক লজ্জায় মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অসহায় পরিবার। ঘটনা জানাজানির পর এলাকায় তোলপার হলে পালিয়ে যায় ধর্ষক অমানবিক এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে আজ শনিবার সেনাবাহিনী,উপজেলা প্রশাসন ও মির্জাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনী ব্যবস্থা নিতে ধর্ষিতা শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে থানায় ডেকে এনে অভিযুক্তদের নামে মামলা গ্রহনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন শিশু ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন।টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেরার ১১ নং আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামে এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (৮ মার্চ) মির্জাপুর থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসির স্ত্রী দ্ধিতীয় শ্রেণী পড়–য়া শিশু কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। সংসারের অভাব অনটনের মধ্যে শিশুর মা গামেন্টেসে কাজ করেন।
গত সোমবার মেয়েকে বাড়িতে রেখে তার মা কাজে যান। বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় কুড়িপাড়া গ্রামের নওসের আলীর ছেলে ফিরোজ মিয়া (৪৫) শিশুকে কৌশলে ধর্ষন করে এবং তার মোবাইলে ভিডিও করে। ভিডিও করে তাকে হুমকি দেয় ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ধর্ষনের ঘটনার কয়েক দিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার মাতাব্বর বাবুল মিয়া,আব্দুল মালেক মিয়া,ফাজু, ইউনুছ আলী, নুর ইসলাম, আলম হোসেন, খোরশেদ আলম ও আলীম সহ ১৫-২০ জন মাতাব্বর গ্রাম্য শালিসে ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং জুতাপেটা করা হয়। দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৯২ হাজার পরিশোধ করা হলেও বাকী টাকা নিয়ে লাপাত্তা দিয়েছে মাতাব্বরগন। মাতাব্বরদের চাপে ঘটনা মীমাংশা করা হলেও শিশু কন্যাকে নিয়ে বিপাকে পরেন পরিবার। লোক লজ্জার ভয়ে মেয়ে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
এদিকে ঘটনা সামাজিক যোগাােযগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে ধর্ষক ও মাতাব্বরদের শাস্তির দাবীতে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। আজ শনিবার মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মির্জাপুর সার্কেল এইচ এম মাহবুব সিদ্দিকী ও মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.মোশারফ হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধর্ষিতা শিশু ও তার মাতাকে খুঁজে বের করে রাতে থানায় নিয়ে আসেন। ধর্ষিতার পরিবারকে সার্বিক নিরাপত্তা এবং ধর্ষকসহ মাতাব্বরদের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন শিশুর মাতা।
অপর দিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষন ও ভিডিও করার খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকায় শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহলেল মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ধর্ষক ফিরোজ ও মাতাব্বরদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে আগামীকাল রবিবার বেলা এগারটায় আজগানা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মানব বন্ধনসহ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমরা সচেতন নাগরিক নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আজগানা ইউনিয়নবাসি এই কর্মসুচী দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ধর্ষিতা শিশুর মাতা বলেন, ধর্ষক ফিরোজ ও তার পরিবার এবং মাতাব্বরদের চাপে শালিসে রাজি হয়েছিলাম। লোকলজ্জার ভয়ে আমি প্রথমে মামলা করতে পারিনি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই এবং আমার শিশু কন্যাসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম এবং মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, শিশু ধর্ষনের ঘটনা খুবই অমানবিক এবং দুঃখ জনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর প্রশাসন থেকে শিশুর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে থানায় এনে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ষক ফিরোজ ও মাতাব্বরগন পলাতক। তাদেরকে গ্রেফতারে কাজ করেছেন পুলিশ।