নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে এ সংশোধন আনা হতে পারে। খসড়ায় বেশকিছু নিয়মে পরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার থাকছে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। গতকাল বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সপ্তম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। কমিশন সভায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০২৫ চূড়ান্তকরণ এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত আলোচনা হয়।
ইসি মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না, এটা ইন করা হচ্ছে। পোস্টার ব্যবহার বাদ করার ব্যাপারে যেটা সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল, আমরা একমত হয়েছি। আমরা পোস্টার ব্যবহার বাদ দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। ব্যানার, ফেস্টুন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইত্যাদিগুলোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। ভোটার স্লিপ ইন্ট্রোডিউস করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টি-শার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল। এটার ব্যাপারে একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম এজেন্ডা সম্পন্ন করতে পেরেছি। সময়ের অভাবে এবং কিছু উপাত্ত বাকি থাকায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণী-বিষয়ক আলোচনা আজ হয়নি। আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের সীমানার বিষয়টি সম্পন্ন হবে।তিনি জানান উল্লেখযোগ্য যে বিষয়গুলো এসেছে নতুনভাবে— প্রথমত হচ্ছে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওর ধারা ৯১-এর ঙ-তে যা আছে প্রার্থিতা বাতিল করার, এটা এর আগে আচরণবিধিতে সন্নিবেশিত ছিল না। এটাকে সন্নিবেশ করা হচ্ছে। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে যারা বিবেচিত হন সেখানে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ফ্যাসিলিটির ব্যবহার যেমন সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো, রেস্টহাউজের ওপর কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন, তাদের এ প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পরে সেখান থেকে পদত্যাগ করতে হবে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাই প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকেন। এটা সংস্কার কমিশনেরও একটা সুপারিশের মধ্যে ছিল। তিনি জানান, সরকারি ব্যক্তি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রপার্টি ইত্যাদি ব্যবহারের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা কঠোর করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কোনো ধরনের ফরেন ইনভেস্টমেন্ট না করা হয়েছে। কমনভাবে একটি প্লাটফর্ম থেকে সব প্রার্থী যাতে ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন বা করেন সেটার বিধান করা হয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনে যে নরমাল শাস্তি ছিল আগে যেটা ছিল ছয় মাস কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা সেটাকে ছয় মাস কারাদণ্ড এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে; যেটা সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিল।
খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আচরণবিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে আচরণবিধিমালার অনেকগুলো পরিবর্তন বা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। এটা আরপিওর ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে যেটা চূড়ান্ত হয়েছে এটা প্রকাশ হয়ে যাবে আমাদের ওয়েবসাইটে। ওপরে লেখা থাকবে আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যদি কোনো আপত্তি আসে সেটিও বিবেচনায় নেবে কমিশন।