র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া, গাজীপুরের সাতাইশ চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যা কান্ডের মূল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ অনুমান সকাল ১১.০০ ঘটিকায় আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কলতাসুতি গ্রামের কেন্দ্রীয় গণকবরের ভিতর বিবস্ত্র একটি লাশ পাওয়া যায় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতে জানা যায় যে, মৃত ভিকটিমের নাম আরিফ হোসেন (১৯) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর থানার বাজরা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে। সে কালিয়াকৈরের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় একটি পোশাক রং তৈরির কারখানায় চাকুরি করতো।
গত ২১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় বিশ্বাসপাড়া এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরেনি। নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের বাড়ি ও সম্ভব্য স্থানে খোঁজা খুঁজি করে না পেয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে বিকেলে নিহত আরিফের ফুফু জানতে পারে যে আশুলিয়া থানা অজ্ঞাতনামা একটি লাশ উদ্ধার করেছে। তাৎক্ষনিক নিহতের ফুফু আশুলিয়া থানায় এসে অজ্ঞাতনামা লাশটি আরিফ (১৯) কে সনাক্ত করে।
ভিকটিমের বড় ভাই অজ্ঞাতনামা আসামী করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে র্যাব-৪ আরিফ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনতে তৎক্ষণাৎ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গত ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আরিফ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত মূলহোতা ১। সেন্টু সরদার (৩৫), জেলা- রাজশাহী সহ ২। মোঃ জমির উদ্দিন (৩৩), জেলা-দিনাজপুর ৩। রাব্বি আহম্মেদ (২৪), জেলা-সুনামগঞ্জ, ৪। মোঃ জহিরুল ইসলাম (৩৫), জেলা-টাঙ্গাইল কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত আসামী সেন্টু সরদার এর সাথে গাজীপুরের একটি গামের্ন্টসে চাকুরীর করার সুবাদে মৃত ভিকটিম আরিফ (১৯) এর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আরিফ গামের্ন্টস এ চাকুরী পাওয়ার জন্য সেন্টুর সাথে যোগাযোগ করে। তখন সেন্টু সরদার (ভুয়া জিএম) জমির উদ্দিন এর মোবাইল নম্বর দেয় ও তার সাথে যোগাযোগ করতে বলে। মৃত ভিকটিম আরিফ জমির উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করিলে জমির উদ্দিন গত ২১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে আশুলিয়া এলাকায় দেখা করার জন্য বলেন।
ধৃত আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ও সুকৌশলে আরিফ (১৯) কে আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কলতাসুতি গ্রামের কেন্দ্রীয় গণকবরের ভিতর নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় এবং আরিফ (১৯) এর মুখ চেপে ধরে ও পরিহিত প্যান্ট খুলে হাত-পা বেধে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। আরিফ টাকা দিতে অস্বীকৃত জানায় ও ধস্তাধস্তি শুরু করে।
এক পর্যায়ে আসামীরা আরিফের গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আরিফ এর মৃত নিশ্চিত করার পর লাশটি কবরস্থানের নির্জন এলাকায় ফেলে তারা ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে আত্মগোপন করে। গ্রেফতারকৃত আসামিরা এই ঘটনার সাথে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
আসামীরা পেশাদার চাঁদাবাজ ও প্রতারক চক্র, তারা সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন গামের্ন্টস এর ভুয়া জিএম, সুপার ভাইজার পরিচয়ে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত।