ঈশ্বরদীতে ইটভাটায় প্রশাসনের নাকের ডগায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ    

.মাইনুল ইসলাম

(ঈশ্বরদী ঘুরে এসে)পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাঙের ছাতার মত যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা আর এই অবৈধ ইটভাটার অবৈধ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন জয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দোহাই দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

এক প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হলেও কৃষি আবাদ আর সবজি উৎপাদনে এ এলাকা বেশ সমৃদ্ধ। সেই কৃষি আবাদের শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে এ ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে অবৈধ অর্ধশত ইটভাটা আর এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এসব ইটভাটার জন্য ফসলী জমি কমে যাওয়া ও ইটভাটা থেকে পরিবেশ বিনষ্টকারী ধোঁয়া নির্গত হওয়ার কারণে লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে সবজি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি চরম ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় কৃষকদের। কিন্তু ইটভাটার মালিকরা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানান, ভুক্তভোগী মালিক এবং কৃষকরা। স্থানীয়রা বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা অবৈধ মালিক সমিতি রয়েছেন। আর এই মালিক সমিতির নেতৃত্ব দেন জালাল উদ্দিন জয়, তিনি এই অবৈধ ভাটা মালিক সমিতির অবৈধ সাধারণ সম্পাদক বলে নিজেকে দাবি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ভাটা মালিকেরা বলেন, আপনারা বলবেন কি আর আমরা তো অবৈধ ভাবেই পরিচালনা করে আসছি। আর আমাদের কোন কাগজ পাতি নাই, নেই কোন বৈধতা। এখন আমাদের কি আর করার আছে, টাকা পয়সা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইট ভাটা চালাইতে হয়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কারা? আমরা এরকম প্রশ্ন করলে, মালিকেরা বলেন, কেন আমাদের জয় ভাই আছে না? এ বছর আমাদের শুধুমাত্র লক্ষীকুন্ডায় প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ টা ইটভাটা রয়েছে প্রতি ইট ভাটা হতে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে আমরা তাকে দিয়েছি। এবং বিভিন্ন ঝুট ঝামেলা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্যই আমরা মালিকেরা প্রতি ইটভাটা হতে ১,৫০,০০০/= এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছি।

তাতে করে কি আপনাদের প্রশাসনিক চাপ কমেছে কি? এরকম প্রশ্নের উত্তরে এক ইটভাটা মালিক বলেন, মোটেও ঝামেলা কমে নাই বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসবে প্রোগ্রামে বিভিন্ন দপ্তরে আমাদেরকে নিজেরাই চাঁদা দিতে হয়। আর বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করেন এবং নগদ টাকা জরিমানাও করে। তখন কি আপনাদের ইট ভাটা মালিক সমিতির জালাল উদ্দিন জয় ভাই, উপকারে এগিয়ে আসেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন,তখন ফোন দিলে জয় ভাই বলেন,যেভাবে সম্ভব তাদেরকে ম্যানেজ করুন তারা সরকারি লোক। ইটভাটা মালিকদের প্রশ্ন যে, আমাদের কাছ থেকে একেক ভাটার মালিকরা যে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার করে টাকা দিল তা কোন কাজেই আসলো না। প্রশ্ন আপনারা টাকা দেন কেন? এরকম প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, না দিলে ভাটা এবছর আর চালাইতে পারবো না। তারা প্রশাসন দিয়ে বন্ধ করে দিবে এই ভয়েই টাকাটা দেই। আমাদের এই টাকা আমাদের ইটভাটা মালিকদের কোন কল্যাণ মূলক কাজে আসে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা অবৈধ ইটভাটার সভাপতি রাজা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন জয় লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে মোট ইটভাটার সংখ্যা রয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টা প্রায় ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন ইটভাটার মালিকেরা। এসব বিষয়ে অবৈধ ইটভাটার অবৈধ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন জয় এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি আমাদেরকে বলেন, আপনাদের কাছে যে অভিযোগটি করেছে তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে সত্যটা কি? জানতে চাইলে, তিনি আমাদেরকে বলেন, টাকা নিয়েছি এটা সত্য কিন্তু ইটভাটার মালিকদের কল্যাণের কাজেই ব্যয় করেছি। তবে মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি তার কথা কাজের কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। তবে ইট ভাটার লোড গাড়ির যাতায়াতের কারণে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের প্রতিটা রাস্তাঘাট কালভার্টের বেহাল অবস্থা দেখা গেছে।

সম্প্রতি লক্ষ্মীকুণ্ডায় অবৈধ ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন ওই এলাকার কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা। অবিলম্বে কৃষি ও কৃষক সমাজকে বাঁচাতে লক্ষ্মীকুণ্ডায় অবৈধ ইটভাটার সব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

তবে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিগগিরই এসব অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে। লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, কামালপুর, বিলকেদার, বাবুলচারাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একর একর জমি নষ্ট করে একেকটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ। ইটভাটায় পোড়ানো সেসব জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় মারাত্মক ভাবে,, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। এতে চরমভাবে ক্ষতি হচ্ছে আশপাশের কৃষি আবাদ। ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলার কারণে পার্শ্ববর্তী শত শত একর জমির আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অসহায় চাষীরা এর প্রতিকার চেয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না। উল্টো তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন, অবৈধ ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন জয়। অন্যদিকে,লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। সেই নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার জন্য ভেকু মেশিন লাগিয়ে নদীর পাড় থেকে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। শুধু লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নেই ৮-১০টি স্থানে এভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান স্থানীয়রা। দাদাপুর গ্রামের ইটভাটার পাশের একটি জমির কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ইটভাটার ধুলার কারণে কোন ধরনের ফসলাদি হয়না। একই চিত্র দেখা যায় প্রতিটি ইটভাটার পার্শ্ববর্তী জমির সবজির ওপর। এলাকার এক কৃষক জানান, ইটভাটার কারণে তার জমিতে কয়েকবার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবাদ করে কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ইটভাটার মালিকের কাছে কম দামে সেই জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এ বিষয়ে কৃষক নেতা আবুল হাসেম ও সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরের কৃষকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। ফসলী জমি নষ্ট করে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে শিগগিরই মানববন্ধনসহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, লক্ষ্মীকুণ্ডায় ফসলী জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণ করায় কৃষিজমির পরিমাণ কমে আসছে। এছাড়া ইটভাটার কারণে পার্শ্ববর্তী জমির ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ভাটার ধোঁয়া ও ছাই ফসল এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি তিনি খোঁজখবর নিয়ে লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে জানাবেন বলেও আমাদেরকে তিনি জানান।

শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ

তাপপ্রবাহে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x