আশুলিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে তাজরীন ফ্যাশনের শতাধিক নিহত শ্রমিকের স্মরণে পুড়ে যাওয়া ভবনের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, শ্রমিক ও আহত নিহতদের স্বজনরা। এসময় বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক সংগঠনগুলো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরীন ফ্যাশনের সামনে শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন। পরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফেস্টুন ব্যানারে ফুল দিয়ে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকরা বলেন, তাজরীন ট্রাজেডির ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করতে হবে।
এসময় বাংলাদেশের পতাকাসহ লাল পতাকা নিয়ে শ্লোগান দেন শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা। তাজরীন ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিক সুমি আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমরা দাবি জানিয়ে আসছি, আমাদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু আমাদের কোনো দাবি আজও পর্যন্ত পূরণ হলো না। অবিলম্বে কারখানার মালিক দেলোয়ারসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার ১০ বছর পার হলেও এখনো দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। এতে সরকারের অবস্থানটি স্পষ্ট। এ কারণে পরবর্তীতে রানাপ্লাজা ধসে আবারও হতাহতের ঘটনা ঘটে। অবিলম্বে তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার এবং পুড়ে যাওয়া ভবনটি সংস্কার করে শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, আমাদের শ্লোগান ছিল ‘মৃতদের স্মরণ করো, জীবিতদের জন্য লড়াই করো; দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ আইন বদল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন চাই। এসব দাবি নিয়ে আমরা গত ১০ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি।
তিনি বলেন, দশ বছর আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর গার্মেন্টস কারখানার ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের একটি স্মরণীয় ট্রাজেডির দিন। ১০ বছর পার হয়েছে মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং স্বজনপ্রীতির দোষে আজো শাস্তি হয়নি তাজরীনের দোষী মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য দোষীদের। উল্লেখযোগ্য কোনও বদল হয়নি ক্ষতিপূরণের আইনে। ক্ষতিগ্রস্তদের হয়নি যথাযথ পুনর্বাসন।
তাসলিমা আখতার আরও বলেন, বাংলাদেশের ৪০ লাখ শ্রমিকের প্রতিনিধি তাজরীনের শ্রমিকরাও। বাংলাদেশের নাম আর সব শ্রমিকের মতো তাজরীন শ্রমিকরাও সারা দুনিয়ায় পরিচিতি করেছিল। অথচ মালিক, সরকার আর বায়ারের অবহেলা এবং অমনোযোগে প্রাণ হারায় সেই শ্রমিকরা। বিচারহীনতার ১০ বছর বলে দেয় শ্রমিকের জীবন ও স্বপ্নর কোনও মূল্য নেই সরকারের কাছে। রপ্তানি আয়ের শীর্ষখাতের শ্রমিকদের জীবন ও স্বপ্ন, মালিক সরকার এবং বায়ারদের কাছে কত সস্তা তাজরীনের আগুনে নিহত শ্রমিকরা যেন তার সাক্ষ্য দেয়। এসময় তিনি দোষীদের শাস্তি, ক্ষতিপূরণ আইনের বদল ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন দাবি করেন। একইসাথে জীবিত শ্রমিকদের জন্য বাঁচার মতো মজুরি দাবি করেন তারা।
গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রমিক ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স টেইলার্স লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে সময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও নীরবতা পালন করা হয় এবং মোনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১১৪ জন শ্রমিক। আহত হন আরও প্রায় দুই শতাধিক। প্রতি বছর নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।