পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল পৌনে ৮ কোটি টাকা

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল রেকর্ড পরিমাণ টাকা। মোট টাকার পরিমাণ সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। মসজিদের নয়টি দানবাক্স বা সিন্দুক খুলে এসব টাকা পাওয়া গেছে।

শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে টাকাগুলো গণনা করতে।
এই মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে রেকর্ড পরিমাণ এত টাকা আর কখনো পাওয়া যায়নি। চার মাস ১১ দিনে মসজিদের দান বাক্সে এ টাকা জমা পড়ে।

শনিবার সকাল সা‌ড়ে ৭টার দি‌কে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মস‌জিদ ক‌মি‌টির সভাপ‌তি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজা‌দ এবং পু‌লিশ সুপা‌রের মোহাম্মদ রা‌সেল শে‌খের তত্ত্বাবধা‌নে মস‌জি‌দের দান বাক্সগুলো খোলা হয়।
দানবাক্স থেকে টাকা বের করে ২৭টি বস্তায় ভরা হয়। এরপর বস্তাবন্দি টাকাগুলো নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। শুরু হয় গণনা পর্ব। টাকাগুলো গণনা করতে লোক লাগে ২০৬ জন।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত পৌনে ২টা পর্যন্ত চলে গণনার কাজ।

দান বাক্স খুলে টাকাগুলো যখন ২৭টি বস্তায় ভরা হয় কমিটির লোকজন তখনই ধারণা করা হয়েছিল যে এবার টাকার পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

শুধু কি টাকা? নগদ টাকা ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারো দানবাক্সে মিলেছে বিদেশী মুদ্রা ও সোনা-রুপার বিপুল অলংকার! এবার অলংকারের ওজন পাঁচ কেজি ছাড়িয়ে গেছে বলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির এক সদস্য।

টাকার পরিমাণ নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পাগলা মসজিদের দান বাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ।
টাকা গণনা শেষে রাত ২টায় নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মহুয়া।

সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। এই কারণে তারা টাকা পয়সা নিয়ে ছুটে আসে এই মসজিদে। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকজনও এ মসজিদে দান করে থাকে।

সাধারণত তিন মাস পর পর মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়। করোনার পর থেকে বাক্স খোলার সময়ের কিছুটা হেরফের হয়। তাছাড়া রমজান মাস থাকার কারণে এবার বাক্সগুলো খুলতে একটু দেরি হয়। এবার চার মাস ১১ দিন পর খোলা হয়েছে পাগলা মসজিদের দানবাক্স।

এর আগে সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর এ মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে সর্বোচ্চ ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

তারও আগে গত ১৯ আগস্ট খোলা হ‌য়ে‌ছিল মস‌জি‌দের সিন্দুকগু‌লো। তখন পাওয়া যায় পাঁচ কো‌টি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। গতবছরের মে মাসের ৬ তারিখে দানবাক্স থেকে মিলেছিল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায় চার কোটির বেশি টাকা।

স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। এ কারণে মসজিদের দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে লোকজনের থাকে অনেক কৌতুহল। তাই গণনা শেষে প্রতিবারই জানিয়ে দেয়া হয় টাকার অঙ্ক।

তবে স্থানীয়রা অনেকে বলেছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত। এছাড়াও প্রতিদিন মসজিদটিতে কুরআন মজিদ, মোমবাতি, গবাদি পশু, গাছের ফলফলাদি ইত্যাদি মানত হিসেবে দান করা হয়। টাকার মূল্যে এগুলো দান বাক্সের টাকার সমপরিমাণ বা কোনো কোনো সময় এরচেয়ে বেশি হয় বলে অনেকের ধারণা। এগুলোর হিসাব মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে কোনো সময়ই প্রকাশ করা হয় না। এগুলো বিক্রির টাকার হিসাব জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করারও দাবি এলাকাবাসীর।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় খোলা হয় মসজিদের নয়টি দানবাক্স বা সিন্দুক। দানবাক্স থেকে টাকাগুলো বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে মেঝেতে রেখে যখন গণনা করা হয় এ বিরল দৃশ্যের ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে শহরের শত শত মানুষ জড়ো হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা দেশের আর কোনো মসজিদে মিলে না। টাকার সাথে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশী মুদ্রাও। তাছাড়া প্রতিদিন বিপুল সংখ্যাক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে থাকে লোকজন।

আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে। এবার পারভীন আক্তার নামে এক মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে সাইফুল ইসলাম নামে হবিগঞ্জের এক তরুণের চিঠি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। ওই চিঠি ছাড়াও অসংখ্য চিঠি পাওয়া গেছে দানবাক্সে।

সকালে দানবাক্স বা সিন্দুক খোলার সময় মসজিদে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড়সড় দল টাকা-পয়সা গণনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। পরে বস্তাগুলো ধরাধরি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমান গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেয়া হয় টাকাগুলো। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ।

পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে। তাই এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারি, মসজিদের কর্মচারি ও কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সবমিলিয়ে ২০৬ জন লোক দিন থেকে রাত পর্যন্ত টাকা গণনার কাজে ব্যস্ত থাকেন।

মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছে যথাক্রমে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।

জানা গে‌ছে, মসজিদের দানের টাকা গচ্ছিত থাকে রূপালী ব্যাংকে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দেয়া হয় বলে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এছাড়াও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এইসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারাবছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ এমনটাই বলছেন জেলা প্রশাসক।

মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়ত কাজে হাত দিতে পারব আমরা।

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সাথে আজ পাগলা মসজিদের পরিধির সাথে বেড়েছে খ্যাতিও।

রংপুরে তুলা গবেষণা কেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে

রংপুরে তুলা গবেষণা কেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কিছু গবেষণা ও বীজ উৎপাদনের তুলার বস্তা পুড়ে গেছে। সেই...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x