বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ কমলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ বুধবার বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলোর শব্দ তেমন শোনা যায়নি। তাই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা নিশ্চিন্তে কাটিয়েছেন গত দুই দিন।
ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, এখন সীমান্তের ওপারে কোনো গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে। নাফ নদীতেও কোস্টগার্ড এবং বিজিবি টহল জোরদার করেছে। সীমান্তে গতকাল থেকে মর্টার শেল কিংবা গোলাগুলির বড় ধরনের শব্দ আসেনি। ছবি: ইত্তেফাক নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের সীমান্ত আপাতত শান্ত রয়েছে। মর্টার শেল কিংবা গোলাগুলির বড় ধরনের শব্দ আসেনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মোটামুটি শান্ত রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এই সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সকালে গুলির শব্দ শোনা গেছে, তবে অনেক ভেতরে। এই গুলির শব্দ তেমন আতঙ্কজনক নয়।
এদিকে অস্ত্রসহ পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ৩৩০ জন বিজিপি ও জান্তা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে সন্ত্রাসী দলের কোনো সদস্য থাকলে তা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হবে মনে করছেন স্থানীয়রা। এদের মধ্যে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর গুপ্তচর থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। এই জান্তা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো জানান, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে গোলাগুলি থেকে রক্ষা পেতে এবার বাড়িঘরেই ‘বাংকার’ তৈরি করে থাকছেন নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুবাসী।
আবু তাহের (৭৬), কপিল উদ্দিন (৪০) ও কামাল হোসাইনসহ (৩৭) একাধিক এলাকাবাসী জানান, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু থেকে আরও পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের একটি নজরদারি চৌকি। সেখানে একটি টং ঘরের মধ্যে পাঁচজন বসে আছেন। মাঝে-মধ্যে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। যাদের মধ্যে আরাকান আর্মির ইউনিফর্ম পরা একজন আর অন্যরা সাধারণ পোশাকে। তাদের সবাই অস্ত্রধারী।
এলাকাবাসী বলছেন, এরা সবাই আরাকান আর্মির সদস্য। সাত দিনেরও বেশি সংঘাতের পর এখন রাখাইন রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। তারাই পাহারা দিচ্ছে সীমান্তে। এপার থেকে তাদের স্পষ্ট দেখা যায়। সীমান্তের বিভিন্ন সীমান্ত প্রাচীরে আরাকান আর্মির সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিতে দেখা গেছে। সেখানে মিয়ানমারের জান্তা সেনাবাহিনীর কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি।
খুব প্রয়োজন ছাড়া মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সীমান্তের কাছাকাছি নিজের জমিতেও যাওয়া নিষেধ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, পরিস্থিতি অবনতির পর এখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু এখনও সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে পুরোপুরি আতঙ্ক কাটেনি।