রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবন মালিকের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুলকে গ্রেপ্তার করে করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার (২ মার্চ) ধানমণ্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো.আক্তারুল ইসলাম। তিনি বলেন: কিছুক্ষণ আগে হামিমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, চায়ের চুমুক রেস্তোরাঁর মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জিসান ও ভবনের মালিকের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুল।
শনিবার (২ মার্চ) ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন: শুক্রবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলার আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও এজাহারে কর্তৃপক্ষীয় ব্যর্থতার কথা এসেছে কি না জানতে তিনি বলেন: মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা যায়, গ্রিন কোজি কটেজের জমির মালিক হামিদা খাতুন। আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন সেখানে ভবনটি তৈরি করে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, ওই ভবনে রেস্টুরেন্ট ও শোরুমের কোনো অনুমতি ছিল না। অগ্নি-ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও কোনো বাধা ছাড়াই সাততলা ভবনটির কার্যক্রম চলছে। ফায়ার সার্ভিস তিনবার নোটিশ জারি করলেও ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ভবনটির প্রতিটি তলায় প্রায় দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের আটটি তলা রয়েছে। সিঁড়িটি মাত্র চার ফুট চওড়া। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর অ্যামব্রোসরিয়া রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড মিউজিক ক্যাফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৯০ দিনের মধ্যে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে নোটিশ দেওয়া হয়। অ্যামব্রোসরিয়া রেস্তোরাঁ ও মিউজিক ক্যাফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) সরদার মিজানুর রহমান, এমনকি অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস উল্লেখ করেছে যে, বেসমেন্টটি পার্কিংয়ের জন্য সংরক্ষিত, সেখানে একটি কফি শপ সহ বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। তাছাড়া নিচতলায় আটটি দোকান, প্রথম তলায় একটি রেস্টুরেন্ট, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কাপড়ের দোকান এবং চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় রেস্টুরেন্ট ছিল। এছাড়াও, প্রতিটি তলার সিঁড়িতে ৩৫ কেজি ওজনের বড় গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। অষ্টম তলায় স্টাফ রুম এবং নামাজের জায়গা ছিল।
অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনা সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকলেও অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেই। তারা এর জন্য আবেদনও করেনি। বিভিন্ন সময়ে তিনটি নোটিশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক ৯টা ৫০ মিনিটে মিনিটের দিকে বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে আগুন লাগে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেছে র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।