আব্দুল আজিজ:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগে তীব্র সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। দেড় বছর ধরে মহামারী করোনার ক্ষতি কাটিয়ে আবারও তীব্র সেশনজটের কবলে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ভোগান্তি, পরিবারের চাপ, মানসিক চাপ ও ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিসিএস, বিজেএস, ব্যাংকসহ নানা সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে পিছিয়ে পড়ছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেশনজটের পেছনে কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন- সান্ধ্যকালীন কোর্স, ঠিক সময়ে পরীক্ষা না নেওয়া, বারবার পরীক্ষার তারিখ পেছানো, ফল প্রকাশে ধীরগতি, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততাসহ নানা বিষয়ের কারণে সেশনজট তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে বিভাগগুলোর সভাপতিরা প্রশাসনিক জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করেছেন। এ বিষয়ে সিএসই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রবিউল হক বলেন, এখন সেশনজট অনেকটাই কমে এসেছে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলে খুব শীঘ্রহ স্বাভাবিকতা ফিরবে। প্রশাসনিক জটিলতার কারণেও এটি হয়। কারণ একটি ফাইল পাঠালে সেটি পুনরায় খোঁজখবর না নিলে সেটির অনুমোদন হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইইই, ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা এখনও একাডেমিক লাইফ শেষ করতে পারেনি। বিভাগগুলো মাস্টার্স শেষ করলেও এখনও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। এতে তাদের পোড়াশোনা সম্পন্ন করতে প্রায় ৭-৮ বছর লেগে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সেশনের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা করোনার ছুটি ব্যতিরেকে যথাক্রমে এক-দেড়বছর আগে মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষাজীবনের ইতি টেনেছেন।
সিএসই বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, একই সেশনের অন্য বিভাগের বন্ধুরা মাস্টার্স শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে আমরা মাস্টার্সের ক্লাস করছি। এদিকে সরকারি চাকরির বয়স শেষের দিকে হওয়ায় হতাশায় ভুগছি।
আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. নাছির উদ্দীন বলেন, সেশনজট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। এটি সম্মিলিত কাজ এজন্য সবার আন্তরিক থাকলে আগামীতে কোন জট থাকবে না। তবে একই সেশনে ভর্তি হওয়া অন্য বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা অনার্স শেষ করেছে ছয়মাস আগে। এতে আরও সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা। এখনই সেশনজট প্রতিকারে উদ্যোগ না নিলে শিক্ষাজীবন শেষ করতে প্রায় ৭-৮ বছর লাগতে পারে বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে এসব বিভাগের ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষেরও এক সেমিস্টারের সেশনজট তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিভাগগুলোয় সেশনজট কমাতে বিভাগের শিক্ষকদের আন্তরিক হতে হবে। আমরা নির্দেশনা দিতে পারি। আমরা তো আর যেয়ে পরীক্ষার খাতা দেখে আসব না! একাডেমিক জটিলতা থাকলে আমার সঙ্গে আলোচনা করলে আমি অবশ্যই সেটার সমাধান করে দিবো। এখনো পর্যন্ত কেউ আসেনি। শিক্ষার্থীদেরও উচিত শিক্ষকদের কাছ থেকে ক্লাস, পরীক্ষা আদায় করে নেওয়া।