স্ত্রীকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেফতার আসামির নাম মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭)। তিনি ছদ্মবেশে ১৭ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে থাকতে পত্রিকায় কাজ শুরু করেন আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল। নামসর্বস্ব সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।’
তিনি জানান, আসামি কামালের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে বরিশালে অভিযান চালানো হয়। তবে ওই নম্বরটি আসামি ব্যবহার না করায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। পরবর্তীতে র্যাব সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে আসামির ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানা থেকে একটি পত্রে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামি আশরাফ হোসেন ওরফে কামালকে গ্রেফতারের জন্য র্যাবের কাছে অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
মামলায় উল্লিখিত মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে বরিশালে অভিযান চালানো হয়। মোবাইল নম্বরটি আসামির নামেই রেজিস্ট্রেশন ছিল। কিন্তু ব্যবহার করছেন অন্যজন।
মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে জানা যায়, আসামি কামাল দীর্ঘদিন নম্বরটি ব্যবহার না করায় কর্তৃপক্ষ সিমটি অন্য ব্যক্তির কাছে রিপ্লেসমেন্ট সিম হিসেবে বিক্রি করেছে। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে র্যাব সাইবার পেট্রলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসামির ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। এরপর মাঠপর্যায়ে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে। ফেসবুকে আসামির আশরাফ হোসেন নামে দুটি পেজের সন্ধান পাওয়া যায়। তার পেজে র্যাবের ব্রিফিংয়ের কয়েকটি বক্তব্য শেয়ার করা ছিল। তার পেজের ছবির সঙ্গে তার ছবির মিল পাওয়া যায়।’
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১-এর অভিযানে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে স্ত্রীকে হত্যা করে ছদ্মবেশে ১৭ বছর ধরে পালিয়ে থাকা আশরাফ হোসেন ওরফে কামালকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে আশরাফ তার শিশুপুত্রের সামনে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গোপন করতে মৃতের ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝুলিয়ে দেন।
এরপর প্রচার করেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। পরে এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়। মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ঘটনা সন্দেহজনক হওয়ায় আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা মোতাবেক গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়।
১২ দিন পর শ্বশুরের সহায়তায় জামিন পান কামাল। জামিন পাওয়ার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান। এরপর তিনি কখনোই স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী ও তার কর্মস্থল, নিজ সন্তান ও আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
অপরদিকে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বাসরোধে সানজিদা আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। মামলার এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি করা হয় মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামালকে।
তদন্ত শেষে দণ্ডবিধি ৩০২/২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানা আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচার শেষে মামলার পলাতক আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০-এর ৩০২/২০১ ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আইনের ওই ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।